গারো পাহাড় পেরিয়ে হিমানী পর্বত ছাড়িয়ে “সপ্ত সমুদ্দুর’ পারে বাঘ- ভালুকের বসতি রয়েছে এমন নির্জন বনে বাস করে ডাকাত সর্দার হুমরা বাইদ্যা। তার ছোট ভাই মাইনকা। এই বেদের দল ভ্রমণ করতে করতে এল ধনু নদীর পারে কাঞ্চনপুর গ্রামে। সেখানে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের-
ছয় মাসের শিশুকন্যা পরমা সুন্দরী। রাত্রি নিশিকালে হুমরা তারে করল চুরি।। এক দুই তিন করি শুল বছর যায়। খেলা কছরত তারে যতনে শিখায়। বাইদ্যা বাইদ্যা করে লোকে বাইদ্যা কেমন জনা। আন্দাইর ঘরে থুইলে কন্যা জলে কাথা সোনা।। হাষ্টিয়া না যাইতে কইন্যার পায়ে পরে চুল। মুখেতে ফুঝা উঠে কনক চাম্পার ফুল। আগল ডাগল আখিরে আম্মানের তারা। তিলেক মাত্র দেখলে কইন্যা না যায় পাশুরা।।
মুনির মন টলে যাওয়ার মতো সুন্দরী হয়ে ওঠে সে। নাম তার মহুয়া সুন্দরী। অনেক দিন পরের কথা। বেদের দল উপস্থিত হলো বামনকান্দা গ্রামে। তাদের সঙ্গে রয়েছে খেলা দেখানোর নানা উপকরণ-
তোতা লইল ময়না লইল আরও লইল টিয়া। সোনামুখী দইয়ল লইল পিঞ্জিরায় ভরিয়া।। ঘোড়া লইল গাধা লইল কত কইব আর। সঙ্গেতে করিয়া লইল রাও চণ্ডালের হাড়।। শিকারি কুকুর লইল শিয়াল হেজা ধরে। মনের সুখেতে চলে বৈদেশ নগরে।
এই গ্রামে বাস করে নদ্যার চাঁদ-পূর্ণিমার ঠাদের মতো তার রূপ। মায়ের অনুমতি নিয়ে সে ‘বাইর বাড়ি’র মহলে বাইদ্যার খেলার আয়োজন করে। বেদে কন্যার রূপের কথা আগেই শুনেছিল নদ্যার চাঁদ- স্বচক্ষে তা দেখে এবং খেলা কসরতে মুগ্ধ হয়ে মহুয়াকে সে হাজার টাকার শালসহ নানা বকশিস প্রদান করে। তাদের উলুয়াকান্দায় বাসযোগ্য ও চাষযোগ্য জমি প্রদান করে। বেদের দলের দিন কাটছিল সুখেই। পরস্পরের প্রতি মুগ্ধ নদ্যার চাঁদ ও মহুয়ার এক সন্ধ্যাবেলা জলের ঘাটে দেখা হয় এবং ব্যাকুল হৃদয়ের কথা জানাজানি হয়।
জল ভর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছ মন। কাইল যে কইছিলাম কথা আছে নি স্মরণ’।। “শুন শুন ভিনদেশি কুমার বলি তোমার ঠাই। কাইল বা কি কইছলা কথা আমার মনে নাই।। তুমি ত ভিনদেশি পুরুষ আমি ভিন্ন নারী। তোমার সঙ্গে কইতে কথা আমি লজ্জায় মরি’। “কেবা তোমার মাতা কইন্যা কেবা তোমার পিতা। এই দেশে আসিবার আগে পূর্বে ছিলি কোথা’।। “নাহি আমার মাতাপিতা গর্ত সুদর ভাই। সুতের হেওলা অইয়া ভাইস্যা বেড়াই।
দিন যায়। দিবস রজনী আনমনা মহুয়ার মনের খবর জানতে পারে পালঙ্কসই- পরামর্শ দেয় ভুলে যাবার। মহুয়া বলে:
চন্দ্রসূর্য সাক্ষী সই সাক্ষী হইও তুমি। নদ্যার ঠাকুর হইল আমার প্রাণের সোয়ামী॥ বাইদ্যার সঙ্গে আমি যে সই যথায় তথায় যাই। আমার মন বানধ্যা রাখে এমন স্থান আর নাই।। বন্ধুরে লইয়া আমি অইবাম দেশান্তরি। বিশ খাইয়া মরবাম কিম্বা গলায় দিয়াম দড়ি।।
এদিকে চিরকেলে ভ্রমণ-পিয়াসী বেদের দলের এই গৃহী জীবন বাইদ্যা সর্দার হুমরার ভালো লাগে না। মাইনকার সাথে সে ভিনদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ করে। সময় থেমে থাকে না। ফাগুন যায় যায়। নিম নদের চাঁদ মধ্যরাতে বাঁশি তুলে নেয় হাতে। মে বাশির আহ্বানে ছুটে আসে প্রাণপ্রতিমা মহুয়া। মহুয়া জানায়-
শুন শুন নদ্যার ঠাকুর বলি যে তোমারে। এই না গেরাম ছাড়্যা যাইবাম আজি নিশাকালে।। তোমার সঙ্গে আমার সঙ্গেরে বন্ধু এইনা শেষ দেখা। কেমন কর্যা থাকবাম আমি হইয়া অদেখা।। আর না শুনবাম রে বন্ধু তোমার গুণের বাঁশি। আর না জাগিয়া বন্ধু পুয়াইবাম নিশি।। মনে যদি লয়রে বন্ধু রাখ্যো আমার কথা। দেখা করতে যাইও বন্ধু খাওরে আমার মাথা।। যাইবার কালে একটি কথা বল্যা যাই তোমারে। উত্তর দেশে যাইও তুমি কয়েক দিন পরে।
সেইদিনই অন্ধকার রাতে বেদের দল উত্তর দেশে পালিয়ে যায়- সকাল বেলা এলাকার সবাই দেখে বাড়িঘর সবই আছে কিন্তু বেদের দল নেই। খবর পৌঁছে যায় নদের চাঁদের কাছে। আহার নিদ্রা ত্যাগ করে সে পাগল হয়ে ওঠে মহুয়ার সন্ধানে। গতীর বেদনা সন্টেও একদিন ঘুমন্ত মায়ের পায়ে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়ে নদের চাঁদ। ঘুরতে থাকে মাসের পর মাস যে পথে গেছে বেদের দল। সবাইকে জিজ্ঞাসা করে তার মহুয়াকে দেখেছে কি-না। এদিকে পুত্রের অদর্শনে কীদতে কীদতে মা প্রায় অন্ধ হয়ে গেল। অগ্রহায়ণ মাসের অল্প শীতে কংসাই নদীর পাড়ে নদের চাঁদ মহুয়াকে পেল। আহার নিদ্রাহীন মহুয়া তখন পাগলপ্রায়। সংসারে মন নেই, শরীরের দিকে তাকানো যায় না। সেই মহুয়া নদের চাঁদের আগমনে-
আজি কেনে অকস্মাতে হইল এমন ধারা। ছয় মাইস্যা মরা যেন উঠ্যা হইল খারা।। দেল ভরিয়া কন্যা করিল রন্ধন। জাতি দিয়া নদীয়ার ঠাকুর করিল ভোঞ্জন।।
হুমরা বাইদ্যাও নতুন অতিথিকে তার দলে বরণ করে নিল- কিন্তু আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন। গভীর রাতে বিষমাখানো ছুরি মহুয়ার হাতে দিয়ে বলল-
“আমার মাথা খাওরে কন্যা আমার মাথা খাও দুবমনে মারিয়া ছুরি সাওরে ভাসাও।”
মহুয়ার সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে। ঘুমন্ত প্রিয়তমের কাছে এসে সকল বৃত্তান্ত জানিয়ে নিজ বুকে ছুরি বসাতে চায়। এমন সময় জেগে ওঠে নদের চাঁদ। সকল ঘটনা শুনে বলে-
“তোমার লাগিয়া কন্যা ফিরি দেশ বিদেশে। তোমারে ছাড়িয়া কন্যা আর না যাইবাম দেশে।॥ কী কইবাম বাপ মায়ে কেমনে যাইবাম ঘরে। জাতি নাশ করলাম কন্যা তোমারে পাইবার তরে। তোমায় যদি না পাই কন্যা আর না যাইবাম বাড়ি। এই হাতে মার লো কন্যা আমার গলায় ছুরিণ।। “পইড়া থাকুক বাপ মাও পইড়া থাকুক ঘর। তোমারে লইয়া বন্ধু যাইবাম দেশান্তর।। দুই আঁখি যে দিগে যায় যাইবাম সেইখানে। আমার সঙ্গে চল বন্ধু যাইবাম গহিন বনে”।।
চন্দ্র সূর্য সাক্ষী রেখে, বাপের বাড়ির তাজি ঘোড়ায় চড়ে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে দূজন। পথে পার্বত্য খরস্রোতা নদী। তাজি ঘোড়া বিদায় দিয়ে দুজন তখন পারাপারের চিন্তায় অস্থির। এমন সময় ভিনদেশি এক সাধুর নৌকা পেয়ে তারা তাতে উঠে পড়ে। মহুয়ার রূপ-যৌবনে মুগ্ধ সাধু কৌশলে নদের চাঁদে “উজান পাকো ফেলে দেয়। মহুয়াকে পাওয়ার ইচ্ছায় তাকে সে রানি করে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। নানা প্রতিশ্রুতির পর-
এতেক শুনিয়া মহুয়া কী কাম করিল। সাধুর লাগিয়া কন্যা পান বানাইল।। পাহাড়িয়া তক্ষকের বিষ শিরে বান্ধা ছিল। চুন-খয়েরে কন্যা বিষ মিশাইল।। হাসিয়া খেলিয়া কন্যা সাধুরে পান দিল মুখে। রসের নাগইরা পান খায় সুখে।। “কী পান দিছলো কন্যা গুণের অন্ত নাই। বাহুতে শুইয়া তোমার আমি সুখে নিদ্রা যাই’।। “পান খাইয়া মাঝিমাল্লা বিষে পরে ঢলি। নৌকার উপরে কন্যা হাসে খলখলি”।
অচৈতন্য সাধুসহ নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে নদীপারের বনে প্রিয়কে খুঁজতে থাকে মহুয়া। এক ভাঙা মন্দিরে মুমূর্ধ নদের চাঁদকে খুঁজে পায় সে। এখানেও এক বৃদ্ধ জটাধারী সন্যাসীর কবলে পড়ে মহুয়া। সন্ন্যাসীর হাত থেকে বাঁচার জন্য শেষ পর্যন্ত এক রাত্রে অসুস্থ নদ্যার চাঁদকে কীধে নিয়ে বন ত্যাগ করে। অন্য বনে দিনে দিনে সুস্থ হয়ে ওঠে নদের চাঁদ। সুখেই কাটে সময় এই বনদম্পতির।
কিন্তু একদিন হঠাৎ বংশী ধ্বনি শুনে চমকে ওঠে মহুয়া চোখ থেকে গড়ায় পানি। নদের চাঁদ ভাবে- তার প্রাণপতিমা হঠাৎ এমন বিরস-বদন ও চঞ্চল কেন? হুমরা বাইদ্যা ছোটকালে তাকে চুরি করে এনেছে, এটুকুর বাইরে তার জন্মপরিচয় আজও যে শোেনা হলো না। মহুয়া জানায়- কালকে যদি সে বেঁচে থাকে তাহলে মেকথা বলবে। বলতে বলতেই ঢলে পড়ে মে। নদের চাঁদ ভাবে মহুয়াকে হয়ত সাপে কেটেছে। সেমতেই সে পরিচর্যা করতে চায়। তখন-
কান্দিয়া মহুয়া কয়, এই শেষ দিন। সাপে নাহি খাইছে মোরে গেছে সুখের দিন। দূর বনে বাজল বাশি শুন্যাছ যে কানে। আসিছে বাদ্যার দল বধিতে পরাণে॥ আমারও পালং সই বাঁশি বাজাইল। সামাল করিতে পরান ইসারায় কহিল।। আইজ নিশি থাকরে বন্ধু আমার বুকে শুইয়া। আর না দেখিব মুখ পরভাতে উঠিয়া।।
ঘুম ভাঙতেই দেখে সামনে হুমরা বাইদ্যা দাঁড়ানো। হুমরা মহুয়াকে নির্দেশ দেয় দুশমন নদের চাঁদকে মেরে সুজনকে বিয়ে করতে। সর্দার মহুয়ার হাতে তুলে দেয় বিষলক্ষার ছুরি। মৃত্যু আসন্ন জেনে মহুয়া বলে-
শুন শুন প্রাণপতি বলি যে তোমারে। জন্মের মতন বিদায় দেও এই মহুয়ারে।। শুন শুন মাও বাপ বলি হে তোমায়। কার বুকের ধন তোমরা আইনাছিলা হায়॥ জন্নিয়া না দেখলাম কভু বাপ আর মায়। কর্মদোষে এত দিনে প্রাণ মোর যায়।
বলতে বলতে মহুয়া নিজের বুকেই ছুরি বিদ্ধ করে। হুমরার আদেশে বেদের দল নির্মমভাবে হত্যা করে নদের চাঁদকে। অনুশোচনা জাগে হুমরা বাইদ্যার। ভালোবাসার অমলিন স্মৃতি জাগিয়ে রেখে দুজনেই শায়িত হয় এক কবরে। তাদের কবরে টুপটুপ ঝরে পড়ে পালব্ধ সইয়ের মতো নানা জনের চোখের জল।
লেখক-পরিচিতি
লেখক | মধ্যযুগের কবি দ্বিজ কানাই |
---|---|
জন্মস্থান | পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল |
কার্যক্ষেত্র | লোকনাট্যরীতিতে নাটকের অভিনয় |
প্রশিক্ষণ | তৎকালীন লোকনাট্যরী শিক্ষা |
সাহিত্যিক যাত্রা | সতেরো শতকের কবি, “মহুয়া” পালা রচনার লেখক |
সমাজবাদ | বর্ণবিভক্ত সমাজে উচ্চবর্ণ হলেও শূদ্রশ্রেণির প্রতি সহানুভূতিশীল |
দুঃখ অভিজ্ঞান | তরুণীর প্রতি গ্রণয়াসক্ত হয়ে গভীর দুঃখ ভোগ |
প্রবাদ | “মূলে তাঁর ব্যক্তি জীবনের সংস্কারমুক্ত মানবিক বোধ সক্রিয়” |
শব্দার্থ ও টীকাঃ
শব্দ | শব্দার্থ ও টীকা |
---|---|
গারো পাহাড় | ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো খাসিয়া পর্বতমালার অংশবিশেষ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য এবং কিছু অংশ বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় অবস্থিত। |
হিমানী পর্বত | (হিমানী- বরফপুঞ্জ) বরফের পাহাড়। ভারতের উত্তর সীমানায় অবস্থিত সর্বদা তুষারাচ্ছন্ন পর্বতশ্রেণি। |
শুল | ষোল |
কছরত | কৌশল, দক্ষতা, নিপুণতা |
আগল ডাগল | আগর-ডাগর |
পাশুরা | পাশরা, বিস্মৃত হওয়া |
দইয়ল | দোয়েল |
রাও চণ্ডালের হাড় | রাজ-চণ্ডালের হাড়, চণ্ডালদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির হাড় |
হেজা | শজারু, শজারু > সেজা > হেজা |
বাইর বাড়ি | বাড়ির বাইরের অংশ, বহির্বাটি |
বাইদ্যার খেলা | বেদে দলের নানারূপ খেলা বা শারীরিক কসরত |
সুদর | সহোদর |
সুতের হেওলা | স্রোতের শেওলা, আপনজনহীন, নিঃসঙ্গ |
পালঙ্কসই | মহুয়ার সখী, নাম পালঙ্ক বা পালাং |
বিশ | বিষ, গরল |
গৃহী জীবন | সংসারী বা গার্হস্থ্য জীবন |
বাইদ্যা | বেদে, যাযাবর, সাপুড়ে জাতিবিশেষ |
দেল | দিল, হৃদয় |
জাতি দিয়া | জাতি নষ্ট করে, নদের চাঁদ ব্রাহ্মণ হয়ে মহুয়ার রাঁধা ভাত খাওয়ায় জাতিভ্রষ্ট |
ভোঞ্জন | ভোজন, ভক্ষণ |
সাওরে | সাগরে |
বিষলক্ষা | বিষমিশ্রিত |
তাজি ঘোড়া | উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্যবান অশ্ব, আরবি ঘোড়া |
উজান পাকে | উজানে অবস্থিত জলঘূর্ণি |
উজান | স্রোতের উৎস দিক |
তক্ষকের বিষ | গিরগিটি জাতীয় একপ্রকার বিষধর সরীসৃপের বিষ |
রসের নাগইরা | রসপূর্ণ নাগরিয়া, রসিক নাগর |
পরভাতে | প্রভাতে, ভোরবেলা |
সুজন | বেদে-দলের যুবক সদস্য, দলের ভবিষ্যৎ সর্দার দলের স্বার্থে মহুয়াকে সুজনের সাথে বিয়ে দিতে চায় |
পাঠ-পরিচিতিঃ
দ্বিজ কানাই প্রণীত “মহুয়া” পালাটি মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের গীতিকা (Ballad) ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য সম্পদ। দীনেশচন্দ্র সেন রায়বাহাদুর সংকলিত এবং ১৯২৩ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত “মৈমনসিংহ-গীতিকা’র প্রথম খণ্ড থেকে এ পালাটি গদ্যে রূপান্তর করে গৃহীত হয়েছে। পালাটিতে মহুয়ার দুর্জয় প্রেমশক্তি ও বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয় কীভাবে মানবসৃষ্ট দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেল তারই মর্মন্দ কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। গীতিকাটির কাহিনি গড়ে উঠেছে বর্ণ ও শ্রেণিবৈষম্যমুক্ত একটি মানবিক প্রণয়কে কেন্দ্র করে। একদিকে ছয় মাস বয়সী চুরি হওয়া কন্যা অনিন্দ্যকান্তি মহুয়া অন্যদিকে জমিদারপুত্র নদের চাঁদ।
তাদের অদম্য প্রেম সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু বেদে সর্দার হুমরা সামাজিক, বৈষয়িক ও মনস্তাত্তিক কারণে এ প্রেমের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে নানা প্রতিকূলতা ডিগিয়েও মিলনপিয়াসী দুটি মানব হৃদয় শেষ পর্যন্ত কাজ্জিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে ব্যর্থ হয়। মৃত্যুই হয় তাদের অবশ্যস্তাবী পরিণতি। পালাটিতে কাহিনি বর্ণনায় সংহত রচনারীতির ঘাটতি ও নানা অতিশয়োক্তি রয়েছে! ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপভাষায় রচিত ও নাটকীয় গুণসম্পন্ন এ পালাটিতে বর্ণনারীতির প্রাধান্য রয়েছে। এ অঞ্চলের তৎকালীন সমাজ-বাস্তবতা সমৃদ্ধ পালাটি দুর্জয় প্রেমের অপূর্ব নিদর্শন।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ
১. “মহুয়া” কাহিনিতে বর্ণিত ধনু নদীর পাড়ে কোন গ্রাম?
ক. উলুয়াকান্দা
খ. বামনকান্দা
গ. কাঞ্চনপুর
ঘ. বালিয়াকান্দা
২. অন্ধকার রাতে বেদের দলের উত্তর দেশে পালিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
ক. আগের জায়গা ভালো না লাগা
খ. নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস ভালো না লাগা
গ. নতুন জায়গা আবিষ্কার
ঘ. ভ্রমণবিলাসী মনোভাব
অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
রুস্তম জানেন বাবা-মা কিছুতেই আলেয়াকে মেনে নেবেন না। আলেয়ার বংশগৌরব রুস্তমের সমকক্ষ নয়। আলেয়াকে ছাড়া রুস্তম কিছু ভাবতে পারেন না। তাই তিনি এক রাতে আলেয়াকে নিয়ে অজানার পথে পাড়ি জমান।
৩. অনুচ্ছেদে “মহুয়া” কাহিনির যে দিকগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো-
i. ভাবালুতা
ii. ভালোবাসা
iii. নির্ভীকতা
নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ.i, ii ও iii
৪. ৩ নং প্রশ্নের উল্লিখিত দিকের নিচের কোন বাক্যে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. ঘুমন্ত মায়ের পায়ে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়ে নদের চাঁদ
খ. তোমাকেই যদি না পাই তবে আর কেন বেঁচে থাকা
গ. মহুয়া প্রতিজ্ঞা করে বন্ধুকে নিয়ে দেশান্তরী হওয়ার
ঘ. মহুয়া নদের চাঁদকে না মেরে নিজের বুকে বিদ্ধ করে ভুরি
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
সাগরের সাথে দুলির সম্পর্ক তার বাবা মেনে নেননি। তাই দুলিকে অন্যত্র বিয়ে দেন তারা। অনেকদিন পর দুলির শ্বশুরবাড়িতে ফেরিওয়ালার বেশে হাজির হন সাগর। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে দুলি তাকে চিনতে পারেন। আবারও জেগে ওঠে তাদের পুরনো আবেগ। সুযোগ বুঝে এক রাতে সাগরের হাত ধরে দুলি পালিয়ে যান। তার খোঁজে চারদিকে লোক পাঠানো হয় এবং তাদের অবস্থান খুঁজে পায়। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই দুলি-সাগর একে অপরকে হারাতে রাজি নন। তাই তারা আত্মাহুতি দেন।
ক. বেদের দল একদিন অন্ধকার রাতে কোথায় পালিয়ে যায়?
খ. নদের চাঁদের হাতে মহুয়াকে তুলে দিতে হুমরা বেদে সম্মত নন কেন?
গ. দুলির সাথে মহুয়া চরিত্রের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. সাগর-দুলির প্রেমের শাশ্বত রূপই যেন “মহুয়া” রচনার মূল উপজীব্য মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।