Contents
উচ্চারণরীতি কী?
শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
সুষ্ঠুভাবে উচ্চারণরীতি অনুসরণ না করলে ভাষার গাম্ভীর্য নষ্ট হয়। স্থান, সময়, ব্যক্তি, ভৌগোলিক সীমার ভিন্নতার কারণে উচ্চারণের ভিন্নতা হতে পারে। সময়ের বিবর্তনে বাংলা উচ্চারণে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে।
চলিত বাংলার কথ্য বাচনভঙ্গির বিভিন্ন বৈচিত্র্যের একটি সমন্বিত উচ্চারণমানকে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ বলে ধরা হয়।
বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনঃ
- উচ্চারণের শুদ্ধতা রক্ষিত না হলে ভাষার মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়।
- ভাষার অর্থবহতা বা বোধগম্যতার ক্ষেত্রে উচ্চারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
- শুদ্ধ উচ্চারণ সঠিক মনোভাব প্রকাশে সহায়ক।
- শব্দের অর্থবিভ্রান্তি ও বিকৃতি ঘটার সম্ভাবনা থেকেও মুক্ত রাখে।
বাংলা ভাষা উচ্চারণের সূত্রসমূহ: স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ
স্বরবর্ণ
- শব্দের আদিতে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপরে ‘ই’-কার বা ‘উ’-কার, য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ, ক্ষ, জ্ঞ থাকলে, (ঋ-কার) ও র-ফলা থাকে তবে সে- ‘অ’ এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। [অধীন (ওধিন্), সতী (শোতি), গভীর (গোভির্), অন্য (ওন্নো), অত্যন্ত (ওত্তোন্তো), অক্ষাংশ (ওক্খাঙ্শো), যজ্ঞ (জোগ্গোঁ), গ্রহ (গ্রোহো)।]
ব্যতিক্রমঃ বন্ধ্যা (বন্ধা), মর্ত্য (মর্তো), বধ্যভূমি (বদ্ধোভূমি), লক্ষ্মণ (লক্খোন্), ক্রয় (ক্রয়্)।
- একাক্ষর (monosyllable) শব্দের প্রথমে ‘অ’ এবং পরে দন্ত্য-‘ন’ থাকলে ‘অ’ এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। [মন (মোন্), বন (বোন্)]। কিন্তু পরে মূর্ধন্য-‘ণ’ থাকলে ‘অ’ এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। [গণ (গন্), ঋণ (রিন্]।
- শব্দের মধ্যে “অ” যদি অ, আ, এ, ও এর পরে বসে এবং ই-কার, ঈ-কার, উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার, ক্ষ, জ্ঞ, য-ফলার আগে বসে, তাহলে উচ্চারণ “ও” এর মতো হয়। [রমণী (রমোনি), উপকূল (উপোকুল্), সৌজন্য (শোউজোন্.নো), কাজল (কাজোল্)। লোচন (লোচোন্)]
- তৎসম যেসব শব্দ আলাদা উচ্চারণে হসন্ত উচ্চারিত হয়, সমাসবদ্ধ হয়ে গেলে শব্দমধ্যে সেগুলোর ও-কারান্ত উচ্চারণ হয়। [পথচারী (পথোচারি), দীনবন্ধু (দিনোবোন্.ধু)]
ব্যতিক্রমঃ সংবাদপত্র (শঙ্.বাদ্.পত্ত্রো), শিবরাত্রি (শিব্.রাত্ত্রি)]
- ত, ক্ত এবং ইত- প্রত্যয়যোগে সাধিত শব্দের শেষে “অ” উচ্চারণ ও-কারান্ত হয়। [শক্ত (শক্.তো), পালিত (পালিতো), পরীক্ষিত (পোরিক্.খিতো)]
- শব্দের আদিতে জ্ঞ এবং য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত “আ” এর উচ্চারণ অ্যা এর মতো হয়। [জ্ঞান (গ্যাঁন্), ব্যাপার (ব্যাপার্)]
- বাংলা উচ্চারণে ই ও ঈ এর উচ্চারণ ই এর মতো, উ ও উ এর উচ্চারণ উ এর মতোই হয়ে থাকে। [নদী (নদি), পাখি (পাখি), ঊষা (উশা), উত্তর (উত্.তোর)]
- ঋ এর উচ্চারণ হয় “রি” এর মতো। [ঋণ (রিন্)]
- শব্দের আদিতে “এ”-কারের পরেং, ওঙ থাকলে অ্যা এর মতো উচ্চারণ হয় কিন্তু এর সাথে ই-কার বা উ-কার যুক্ত থাকলে স্বাভাবিক এ-এর মতো উচ্চারণ হয়। [ভেংচা (ভ্যাঙ্.চা), ভেংচি (ভেঙ্.চি)]
- আদ্য এ-কারযুক্ত একাক্ষর ধাতুর সাথে আ-প্রত্যয় যুক্ত হলে সেই এ-এর উচ্চারণ অ্যা এর মতো হয়। [বেচা (ব্যাচা), ঠেলা (ঠ্যালা)]
- একাক্ষর সর্বনাম পদের এ অবিকৃত থাকে। [কে, সে, যে]
ব্যঞ্জনবর্ণ
- ঞ এর উচ্চারণ আনুনাসিক ইয় রূপে। [মিঞা (মিয়াঁ)] এর সাথে চ বর্গের বর্ণ যুক্ত হলে ন এর মতো উচ্চারণ হয়। [বঞ্চনা (বন্.চোনা), লাঞ্ছনা (লান্.ছোনা), জঞ্জাল (জোন্.জাল্), ঝঞ্ঝা (ঝন্ঝা)]
- জ+ঞ=জ্ঞ এর উচ্চারণ গঁ/গ্গঁ এর মতো। [জ্ঞান (গ্যাঁন), বিজ্ঞ (বিগ্.গোঁ)]
- ড় এবং র এর উচ্চারণ ভিন্ন, তাই ব্যবহৃত শব্দের অর্থও ভিন্ন। [বাড়ি (বাড়ি)-ঘর, বারি (বারি)-পানি। জোড় (জোড়্)- জোড়া, জোর (জোর্)- শক্তি। পড়া (পড়া) – পঠন, পরা (পরা) – পরিধান করা।]
- ড় ও ঢ় এর উচ্চারণ অভিন্ন। [মূঢ় (মুড়ো), আষাঢ় (আশাড়্)]
- ং, ও এর উচ্চারণ ঙ্ এর মতো, ণ, ন এর উচ্চারণ ন এর মতো। [সংবাদ (শঞ্.বাদ্), বাংলা (বাঙ্.লা), পাণিনি (পানিনি)]
- জ, য এর উচ্চারণ জ এর মতো। [যম (জম্), জল (জল্)]
- শ ও ষ এর উচ্চারণ শ (sh) এর মতো। [শান্তি (শান্.তি), মিষ্টি (মিষ্.টি)]
- স এর স্বাভাবিক উচ্চারণ ইংরেজি s এর মতো। [স্থান (স্.থান), স্নেহ (স্.নেহো)]। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে তা শ (sh) এর মতো উচ্চারিত হয়। [স্বাভাবিক (শাভাবিক্), আসল (আশোল), প্রশংসা (প্রোশোঙ্.শা)]
- বিস্ময়সূচক শব্দেঃ (বিসর্গ) এর উচ্চারণ অর্ধ-হ এর মতো। [বাঃ (বাহ্)]
- শব্দের মধ্যে বিসর্গ থাকলে দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। [নিঃশ্বাস (নিশ্.শাশ্), দুঃখ (দুক্.খো)]
- ঁ (চন্দ্রবিন্দু) এর উচ্চারণ আনুনাসিক। আনুনাসিক উচ্চারণ না করলে অর্থের বিপর্যয় হতে পারে। [কুড়ি (কুড়ি) – বিশ, কুঁড়ি (কুঁড়ি) – মুকুল। কাটা (কাটা) – কর্তন করা, কাঁটা (কাঁটা) – কণ্টক]
ফলা বা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য
ব-ফলা
- পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ব’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না, তবে আদি বর্ণটির উচ্চারণে সামান্য ঝোঁক বা শ্বাসাঘাত পড়ে থাকে। [স্বাধিকার (শাধিকার), জ্বালা (জালা), শ্বাস (শাশ্)]
- পদের মধ্যে কিংবা শেষে ‘ব’ ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণ-দ্বিত্ব ঘটে থাকে। [দ্বিত্ব ( দিত্.তো), বিশ্ব (বিশ্.শো)]
- উৎ উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের ‘ৎ’ (দ)-এর সঙ্গে ‘ব’-ফলার ‘ব’ বাংলা উচ্চারণে সাধারণত অবিকৃত থাকে। [উদ্বেগ (উদ্.বেগ্), উদ্বৃত্ত (উদ্বৃত্.তো)]
- ক্ থেকে সন্ধির সূত্রে আগত-‘গ্’ এর সঙ্গে ‘ব’-ফলা যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে ‘ব’-এর উচ্চারণ প্রায়শ অক্ষত থাকে। [দিগদিক (দিগ্.বিদিক্), ঋগ্বেদ (রিগ্.বেদ্)]
- ‘ব’-এর সঙ্গে এবং ‘ম’-এর সঙ্গে ‘ব’-ফলা যুক্ত হলে, সে ‘ব’-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। [তিব্বত (তিব্.বত্), লম্ব (লম্.বো)]
- ‘ব’-ফলা, যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে তার কোনো উচ্চারণ হয় না। [উচ্ছ্বাস (উচ্.ছাশ্), উজ্জ্বল (উজ্.জল্), দ্বন্দ্ব (দন্.দো)]
ম-ফলা
- পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ম’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ হয় না, তবে প্রমিত উচ্চারণে বর্ণটি সামান্য নাসিক্য প্রভাবিত হয়ে ওঠে। [স্মরণ (শঁরোন), শ্মশান (শঁশান)]
- পদের মধ্যে বা অন্তে ‘ম’-ফলা সংযুক্ত বর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে, তবে দ্বিত্ব উচ্চারিত শেষ ধ্বনিটি সাধারণত সামান্য নাসিক্য প্রভাবিত হয়। [ছদ্ম (ছদ্দোঁ), আত্ম (আত্.তোঁ), ভষ্ম (ভষ্.শোঁ)]
- গ, ঙ, ট, ণ, ন, ম এবং ল-এর সঙ্গে সংযুক্ত ‘ম’-এর উচ্চারণ সাধারণত অবিকৃত থাকে। [বাগ্মী (বাগ্.মি), বাত্ময় (বাঙ্.ময়), হিরণ্ময় (হিরন্.ময়), সম্মতি (শম্.মোতি), ম-ফলা গুল্ম (গুলমো)]
- যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত ‘ম’-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না, তবে এক্ষেত্রেও যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের শেষ বর্ণটিকে প্রমিত উচ্চারণে সামান্য সানুনাসিক করে তোলে। [সূক্ষ্ম (শুক্.খোঁ), লক্ষ্মী (লোক্.খি)]
- ‘ম’-ফলাযুক্ত কতিপয় সংস্কৃত শব্দ আছে (কৃতঋণ শব্দ) যার বানান যেমন অবিকৃত, উচ্চারণেও সংস্কৃত রীতি অনুসৃত। [কুষ্মাণ্ড (কুশমান্.ডো, বাংলা রীতিতে হওয়া উচিত ‘কুশশাঁন্.ডো’), স্মিত (স্.মিতো, বাংলা রীতিতে ‘শিঁতো)]
য-ফলা
- আদ্য বর্ণে (য)-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটি ‘অ’-কারান্ত বা ‘আ’-কারান্ত হলে প্রায়শ তার উচ্চারণ ‘অ্যা’- কারান্ত হয়ে থাকে। [ব্যক্ত (ব্যাক্.তো), ব্যর্থ ,ব্যার্থো)]
- পদের আদ্য ‘অ’ কারান্ত বর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত (য)-ফলার পরে যদি ই-কার থাকে তবে সেক্ষেত্রে তার উচ্চারণ সাধারণত এ-কারান্ত হয়ে থাকে। [ব্যথিত (বেথিতো) ত্যাজিয়া (তেজিয়া)]
- পদের মধ্যে কিংবা অন্তে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে (য) ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ থাকে না। যথা: সন্ধ্যা (শোন্.ধা), স্বাস্থ্য (শাস্.থো)]
- পদের মধ্য ও অন্ত্য বর্ণে (য-ফলা) সংযুক্ত হলে সে বর্ণটি দুবার উচ্চারিত হয়। [শস্য (শোশ্.শো), সত্য (শত্.তো), কন্যা (কোন্.না), নব্য (নোব্.বো)]
র-ফলা
- পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা সংযুক্ত হলে এবং বর্ণটিতে অন্য স্বরবর্ণ যুক্ত না থাকলে তার উচ্চারণ ‘ও’-কারান্ত হয়ে থাকে, সে-বর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না। [প্রকাশ (প্রোকাশ্), গ্রন্থ (গ্রোন্.থো)]
- (র) ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয় তবে সে-বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। [বিদ্রোহ (বিদ্.দ্রোহো), যাত্রী (জাত্.ত্রি), তীব্র (তিব্.ব্রো), অভ্র (অব্.ভ্রো)]
- র-ফলা এবং ঋ-কার সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ শব্দের আদিতে অনেকটা একইরকম উচ্চারিত হলেও, শব্দের মধ্যে এবং অন্তে উচ্চারণে পার্থক্য ঘটে থাকে। শব্দের মধ্যে র-ফলার উচ্চারণ দ্বিত্ব হয় কিন্তু ঋ-কারের উচ্চারণ দ্বিত্ব হয় না। [বিক্রীত (বিক্.ক্রিতো যা বিক্রয় করা হয়েছে), বিকৃত (বিক্.রিতো – নষ্ট)]
- সংযুক্ত বর্ণে র-ফলা যুক্ত হলে তার উচ্চারণ বিলুপ্ত হয় না। [কেন্দ্র (কেন্.দ্রো), অস্ত্র (অস্.ত্রো)]
ল-ফলা
- পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ল-ফলা সংযুক্ত হলে উচ্চারণ অবিকৃত থাকে এবং সে-বর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না। [ক্লান্ত (ক্.লান্.তো), গ্লানি (গ্.লানি)]
- ল-ফলা যুক্ত বর্ণ শব্দের মধ্যে বা শেষে বসলে উচ্চারণ দ্বিত্ব হয়। [অম্লান (অম্.ম্লান্)]
- ‘ল’ যেহেতু দন্ত্যমূলীয় বর্ণ, তাই এর সাথে ‘শ’ যুক্ত হলে এর উচ্চারণ ‘স’ (s) এর মতো হয়। [শ্লেষ (স্.লেশ), অশ্লীল (অস্.লিল্)
হ-যুক্ত ব্যঞ্জন
- হ এর সাথে ঋ-কার যুক্ত হলে হ এর উচ্চারণ আগেই শোনা যায়। [হৃৎপিণ্ড (hriত্পিন্.ডো), হৃদ্য (hriদ্.দো)]
- হ এর সঙ্গে র-ফলা, ণ, ন, ম, ল যুক্ত হলে, এসব ধ্বনির পর হ-এর ধ্বনি শোনা যায়। [হ্রাস (rhaশ্), চিহ্ন (চিnho), অপরাহ্ণ (অপোরাnho), ব্রহ্মাণ্ড (ব্রোmhaন্.ডো), আহ্লাদ (আlhaদ)]
- হ এর সাথে য-ফলা যুক্ত হলে হ এর আলাদা উচ্চারণ থাকে না, য (বা ‘জ’) এর দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। [বাহ্য (বাজ্.ঝো), সহ্য (শোঝ্ঝো)]
- হ এর সাথে ব যুক্ত হলে, ‘হ’ এর উচ্চারণ বিলুপ্ত হয় এবং ‘ব’ (শ্রুতির ধারা অনুসারে) ‘ও’ বা ‘উ’ তে পরিণত হয়। [আহ্বান (আওভান্), বিহ্বল (বিউভল্)]
কৃতঋণ শব্দের উচ্চারণঃ
বিশ্বের প্রতিটি আধুনিক ভাষাই ধ্বনিপদ্ধতি ও উচ্চারণরীতিতে স্বতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও নানা কারণে একভাষা অন্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করে থাকে। সেসব শব্দকে কৃতঋণ শব্দ বলে। এগুলো বানান, উচ্চারণ এমনকি অর্থগত দিক থেকেও মূল ভাষা থেকে রূপান্তরিত হয়ে যায়, কিন্তু এর মধ্যেও কিছু শব্দে মূল ভাষার প্রভাব রয়ে যায়।
- সংস্কৃত শব্দঃ কুষ্মাণ্ড (কুশ্.মান্.ডো), বাঙ্ময় (বাঙ্.ময়্), একবিংশ (একোবিঙ্.শো)
- আরবি-ফারসি শব্দঃ ইসলাম (ইস্.লাম্), মুসলমান (মুসোল্.মান), শরিফ (শোরিফ্)
- তুর্কি শব্দঃ সওগাত (সওগাত্), খাতুন (খাতুন্)
- ওলন্দাজ শব্দঃ হরতন (হর্.তন্), তুরুপ (তুরুপ্)
- পর্তুগিজ শব্দঃ চাবি (চাবি), বারান্দা (বারান্.দা), কামিজ (কামিজ্)
- ইংরেজি শব্দঃ ব্যালট (ব্যালোট্), সেক্রেটারি (সেক্.রেটারি), পাইলট (পাইলট্), শার্ট (শার্.ট)
শব্দঃ
- আষাঢ় (আশাড়্)
এখানে ষ এর উচ্চারণ শ এর মতো হয়, ঢ় এর উচ্চারণ ড় এর মতো হয় এবং শেষে থাকে হসন্ত। - অক্ষাংশ (ওক্.খাঙ্.শো)
আদ্য অ এর উচ্চারণ ও এর মতো। ক্ষ এর উচ্চারণে খ দ্বিত্ব হয়।ং এর উচ্চারণ হয় ঙ এর মতো। শেষে শ এর ও-কারান্ত উচ্চারণ হয়। - ষান্মাসিক (শান্.মাশিক্)
ষ ও স উভয়ের উচ্চারণ শ এর মতো হয়। ণ এর উচ্চারণ ন এর মতো। ম-ফলা যুক্ত থাকার কারণে ন এর সাথে হসন্ত হয়। - নদীয়া (নোদিয়া)
ন এর সাথে যুক্ত অ এর উচ্চারণ ও এর মতো হয়। ঈ-কার এর উচ্চারণ ই-কারের মতো হয়। - সম্মিলিত (শম্.মিলিতো)
স এর উচ্চারণ শ এর মতো। শেষে ত এর উচ্চারণ ও-কারান্ত। - সজ্ঞান (শগ্গ্যাঁন্)
স এর উচ্চারণ শ এর মতো, জ্ঞ এর উচ্চারণে গ এর উচ্চারণ দ্বিত্ব হয় (যেহেতু শব্দমধ্যে) এবং আনুনাসিক হয়। - পৃষ্ঠপোষক (পৃষ্.ঠোপোশোক্)
ষ এর উচ্চারণ শ এর মতো। ঋ-কার এর উচ্চারণ স্বাভাবিক। - সূচাগ্র (শুচাগ্.গ্রো)
স এর উচ্চারণ শ এর মতো। ঊ-কারের উচ্চারণ উ- কারের মতো। র-ফলার জন্য গ এর উচ্চারণ দ্বিত্ব। - ব্যাখ্যা (ব্যাক্.খ্যা)
আদ্যবর্ণে য-ফলার উচ্চারণ অ্যা এর মতো। শব্দের শেষে য-ফলার উচ্চারণ দ্বিত্ব হয়। - নিঃশ্বাস (নিশ্.শাশ্)
বিসর্গের জন্য শ এর দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। স এর উচ্চারণ শ এর মতো হয়। - ব্যর্থ (ব্যার্.থো)
শব্দের আদিতে য-ফলার উচ্চারণ অ্যা এর মতো। রেফ এর জন্য থ এর পূর্বে র যুক্ত হয় এবং থ এর উচ্চারণ ও-কারান্ত। - রশ্মি (রোশ্.শিঁ)
ম-ফলার জন্য শ এর উচ্চারণ দ্বিত্ব ও আনুনাসিক হয়। - হৃদ্য (হ্.রিদ্.দো)
হ এর উচ্চারণ পূর্বে হয়, র এর উচ্চারণ পরে। দ এর সঙ্গে য-ফলা থাকায় দ্বিত্ব হয়। - ব্রহ্মাণ্ড (ব্রোম্.হান্.ডো)
আদিতে র-ফলার উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়। হ এর সাথে ম ফলা থাকায়, ম এর উচ্চারণ আগে ও হ এর উচ্চারণ পরে হয়। ণ এর উচ্চারণ ন এর মতো। - মধ্যাহ্ন (মোদ্.ধ্যান্.হো)
ধ এর সাথে য-ফলা থাকায় উচ্চারণ দ্বিত্ব হয় এবং অ্যা উচ্চারিত হয়। হ এর সাথে ণ- ফলা থাকায় হ এর উচ্চারণ পরে হয়। - আহ্বান (আওভান্)
হ এর সাথে ব-ফলা থাকায় হ এর উচ্চারণ বিলুপ্ত হয় এবং ও উচ্চারিত হয়। ব এর উচ্চারণ বিকৃত হয় ভ উচ্চারিত হয়। - হিরণ্ময় (হিরন্.ময়্)
কৃতঋণ শব্দের উচ্চারণে ম-ফলায় স্বাভাবিক ম উচ্চারিত হয়।
বহুল প্রচলিত কতিপয় উচ্চারণঃ
মূলশব্দ | উচ্চারণ |
---|---|
উপস্থিত | উপোস্.থিত |
দরখাস্ত | দরখাস্.তো |
প্রায়শ্চিত্ত | প্রায়োশ্.চিত্.তো |
অতি | ওতি |
মর্যাদা | মোর্.জাদা |
লাবণ্য | লাবোন্.নো |
ব্যবহার | ব্যাবোহার |
স্বল্প | শল্.প |
একা | অ্যাকা |
অসীম | ওশিম্ |
পদ্য | পোদ্দো |
বৈশাখ | বোইশাখ্ |
বিদ্বান | বিদ্দান্ |
ছাত্র | ছাত্.ত্রো |
সভ্য | শোব্.ভো |
অক্ষ | ওক্.খো |
অদ্য | ওদ্.দো |
ইতঃপূর্বে | ইতোপ্.পুর্.বে |
উপমা | উপোমা |
পদ্ম | পদ্দোঁ |
তন্ময় | তন্ময়্ |
বিজ্ঞ | বিগ্.গোঁ |
মৃন্ময় | মৃন্ময়্ |
কক্ষ | কোক্.খো |
গ্রীষ্মকাল | গ্রিশ্.শোঁকাল্ |
ব্যাখ্যা | ব্যাক্.খা |
পরীক্ষা | পোরিক্.খা |
প্রণীত | প্রোনিতো |
দায়িত্ব | দায়িত্.তো |
একতা | অ্যাকোতা |
ঐক্য | ওইক্.কো |
জ্ঞাত | গ্যাঁতো |
সৃজনশীল | সৃজোশিল্ |
হিংস্র | হিঙ্.স্.স্রো |
আবশ্যক | আবোশ্.শোক্ |
জিহ্বা | জিউভা |
ধন্যবাদ | ধোন্.নোবাদ্ |
দ্রষ্টব্য | দ্রোশ্.টব্.বো |
গঞ্জনা | গন্.জোনা |
লক্ষ্মণ | লক্.খোঁন্ |
ওজস্বী | ওজোশ্.শি |
উদ্যোগ | উদ্দোগ্ |
অধ্যক্ষ | ওদ্.দোক্.খো |
মন্তব্য | মোন্.তোব্.বো |
নিষিদ্ধ | নিশিদ্ধো |
ব্রাহ্মণ | ব্রাম্.হোন্ |
দীনবন্ধু | দিনোবোন্.ধু |
আবৃত্তি | আবৃত্.তি |
ঔষধ | ওউশধ্ |
অনিঃশেষ | অনিশ্.শেশ্ |
আহ্বান | আওভান্ |
পুনঃপুন | পুনোপ্.পুনো |
ষান্মাসিক | শান্.মাশিক্ |
শুল্ক | শুল্.কো |
ব্রহ্মাণ্ড | ব্রোম্.হান্.ডো |
স্মর্তব্য | শঁর্.তোব্.বো |
গণিত | গোনিত্ |
বিজ্ঞপ্তি | বিগ্.গোঁপ্.তি |
একাডেমি | অ্যাকাডেমি |
ঐশ্বর্য | ওইশর্.শোর্.জো |
ঋগ্বেদ | রিগ্.বেদ্ |
প্রথম | প্রোথোম্ |
সংগ্রহ | শঙ্.গ্রোহো |
ভবিষ্যৎ | ভোবিশ্.শত্ |