বিভক্তিযুক্ত শব্দকেই পদ বলে।
পদের প্রকারভেদ
পদ প্রধানত ২ প্রকার- সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ। সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়া।
অর্থাৎ, পদ মোট ৫ প্রকার-
- ১. বিশেষ্য
- ২. বিশেষণ
- ৩. সর্বনাম
- ৪. ক্রিয়া
- ৫. অব্যয়
বিশেষ্য পদ
কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে। যে পদ কোন ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম, গুণ ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। যেমন: নজরুল, ওমর, ঢাকা, মেঘনা, গীতাঞ্জলি, মানুষ, গরু, বই, খাতা, পঞ্চায়েত, গমন, শয়ন, মধুরতা ইত্যাদি।
বিশেষণ পদ
যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
অর্থাৎ, বিশেষণ পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে।
কিছু বিশেষণ পদ: (‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতা থেকে)
- সফেদ দেয়াল
- শান্ত ফটোগ্রাফ
- জিজ্ঞাসু অতিথি
- ছোট ছেলে
- নিস্পৃহ কণ্ঠস্বর
- তিনটি বছর (সংখ্যাবাচক বিশেষণ)
- রুক্ষ চর
- প্রশ্নাকুল চোখ
- ক্ষীয়মাণ শোক
- সহজে হয়ে গেল বলা (ক্রিয়া বিশেষণ)
সর্বনাম পদ
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে।
অনুচ্ছেদে বা প্যারাগ্রাফে একই বিশেষ্য পদ বারবার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে অনুচ্ছেদে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
যেমন:
‘বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ। এই দেশটি যেমন সুন্দর, এই দেশের মানুষগুলোও তেমনি ভালো। তারা এতোটাই ভদ্র ও মার্জিত যে, তাদের কাছে ভিখারি ভিক্ষা চাইতে আসলে তারা তাদের বিতাড়িত করে না। বরং মার্জিতভাবে বলে, মাফ করেন।’
ক্রিয়াপদ
যে পদ দিয়ে কোন কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।
অর্থাৎ, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোন কাজ সম্পাদন করা বা কোন কাজ সংঘটন হওয়াকে বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কাল অনুযায়ী ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন, ‘পড়’ একটি ধাতু। এর সঙ্গে উত্তম পুরুষ ও সাধারণ বর্তমান কাল অনুযায়ী ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ‘পড়ি’ ক্রিয়াপদটি। আবার মধ্যম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ো’। নাম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ে’। আবার উত্তম পুরুষের জন্য ঘটমান বর্তমান কালের জন্য হবে ‘পড়ছি’। সাধারণ অতীত কালের জন্য হবে ‘পড়েছি’।
অব্যয় পদ
অব্যয় শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ন ব্যয়’, অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই।
যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ, যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থাকে, যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না এবং পুরুষ বা বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে।
অব্যয় পদ বাক্যে কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে কখনো বাক্যকে আরো শ্রুতিমধুর করে, কখনো একাধিক পদ বা বাক্যাংশ বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
বিশেষ্য পদ
কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে। যে পদ কোন ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম, গুণ ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। বিশেষ্য পদ ৬ প্রকার-
- ১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য
- ২. জাতিবাচক বিশেষ্য
- ৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য
- ৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি)
- ৫. ভাববাচক বিশেষ্য (ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব বা কাজের নাম বোঝায়)
- ৬. গুণবাচক বিশেষ্য
সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, প্রাণী, স্থান, নদী, সমুদ্র, পর্বত, গ্রন্থ ইত্যাদির নির্দিষ্ট নাম বোঝায়, তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। একে নামবাচক বিশেষ্যও বলা হয়। যেমন:
- ব্যক্তির নাম: আলাওল, বঙ্কিম,
- প্রাণীর নাম: গরু, ছাগল
- স্থানের নাম: খুলনা, ঢাকা
- নদ-নদীর নাম: ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা
- সমুদ্রের নাম: বঙ্গোপসাগর
- পাহাড়-পর্বতের নাম: হিমালয়
- গ্রন্থের নাম: গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীনা
বাক্যে প্রয়োগ:
- কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি।
- সুন্দরবন খুলনা জেলায় অবস্থিত।
বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদের সাহায্যে কোনো বস্তু বোঝায় এবং যার সংখ্যা নির্দেশ করা যায় না, শুধু পরিমাণ নির্দেশ করা যায়, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: চাল, তেল, দুধ, জল, বালি, লবণ ইত্যাদি।
শ্রেণিবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদ দ্বারা ব্যক্তি, প্রাণী, স্থান, নদী, পর্বত ইত্যাদির সাধারণ নাম বোঝায়, তাকে শ্রেণিবাচক বিশেষ্য বলে। একে জাতিবাচক বিশেষ্যও বলা হয়। যেমন: মানুষ, পাখি, পর্বত, শহর, সাগর ইত্যাদি।
সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যর সঙ্গে শ্রেণিবাচক বিশেষ্যর আপাত মিল লক্ষ করা গেলেও বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যর দ্বারা সুনির্দষ্টি কোনো ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী বা স্থানের নাম বোঝায়।
কিন্তু শ্রেণিবাচক বিশেষ্য পদ এসবের সাধারণ বা অনির্দিষ্ট নাম প্রকাশ করে। যেমন:
- সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (নির্দিষ্ট)- মানুষটি ক্ষুধায় কাতর।
- শ্রেণিবাচক বিশেষ্য (অনির্দিষ্ট) – মানুষ মরণশীল।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদ দ্বারা একজাতীয় ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: জনতা, সভা, সমিতি, দল, পাল, মালা, সারি ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ:
- জনতা ক্ষেপে গেলে কারও রক্ষা নেই।
- এখানে একটা বহুমুখী সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে।
- দল বদল করে আর কত দিন চলবে?
ভাববাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদ দ্বারা ক্রিয়ার ভাব বা কাজের নাম বোঝায়, তাকে ভাববাচক বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: ভোজন, শয়ন, দর্শন, গমন, করা, দেখা, শোনা ইত্যাদি।
ভাববাচক বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ এক নয়। যেমন:
ভাববাচক বিশেষ্য
১. কোটবাড়ি দর্শন করে এলাম।
২. বাবার শয়ন এখনো সম্পন্ন হয়নি।
ক্রিয়াপদ
১. আমি কোর্টবাড়ি দেখেছি।
২. বাবা শুয়েছেন।
গুণবাচক বিশেষ্য
যে বিশেষ্য পদে কোনো গুণ, অবস্থা ও ভাবের নাম বোঝায়, তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সুখ, দুঃখ, দয়া, বীরত্ব, অহংকার, সৌন্দর্য, মধুরতা, তারল্য, তিক্ততা, তারুণ্য প্রভৃতি।
বিশেষণ পদ
যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। অর্থাৎ, বিশেষণ, পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে। যেমন:
ভাঙ্গা ঘর।
করুণাময় তুমি।
ধীরে চল।
সামান্য একটু দুধ দাও।
বাস্তবিকই, আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।
বিশেষণ পদের প্রকারভেদ
বিশেষণ দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন:
নাম বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে।
ভাব বিশেষণ: যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষায়িত করে তাই ভাব বিশেষণ।
নাম বিশেষণ
নাম বিশেষণকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
- ক. রূপবাচক: নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ
- খ. গুণবাচক: চৌকস লোক, দক্ষ কারিগর, ঠান্ডা হাওয়া
- গ. অবস্থাবাচক: তাজা মাছ, রোগা ছেলে, খোঁড়া পা
- ঘ. সংখ্যাবাচক: হাজার লোক, দশ দশা, শ টাকা
- ঙ. ক্রমবাচক: দশম শ্রেণি, সত্তর পৃষ্ঠা, প্রথমা কন্যা
- চ. পরিমাণবাচক: বিঘাটেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ
- ছ. অংশবাচক: অর্ধেক সম্পত্তি, ষোল আনা দখল, সিকি পথ
- জ. উপাদানবাচক: বেলে মাটি, মেটে কলসি, পাথুরে মূর্তি
- ঝ. প্রশ্নবাচক: কতদূর পথ?, কেমন অবস্থা?
- ঞ. নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক: এই লোক, সেই ছেলে, ছাব্বিশে মার্চ
ভাব বিশেষণ
ভাব বিশেষণ চার প্রকার। যেমন:
১. ক্রিয়া বিশেষণ : যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন:
- ক. ক্রিয়া সংঘটনের ভাব: ধীরে ধীরে বায়ু বয়।
- খ. ক্রিয়া সংঘটনের কাল: পরে একবার এসো।
২. বিশেষণীয় বিশেষণ: যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষায়িত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন:
- ক. নাম বিশেষণের বিশেষণ: সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।
- খ. ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ: রকেট অতি দ্রুত চলে।
৩. অব্যয়ের বিশেষণ: যে ভাব বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন: ধিক্ তারে, শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।
৪. বাক্যের বিশেষণ: কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষায়িত করতে পারে তখন তাঁকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন:
- দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
- বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।
বিশেষণের অতিশায়ন
বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে।
যেমন: যমুনা একটি দীর্ঘ নদী। পদ্মা দীর্ঘতর কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী।
বিশেষণের অতিশায়ন দুই প্রকার। যেমন–
- ১. বাংলা শব্দের অতিশায়ন
- ২. তৎসম শব্দের অতিশায়ন
বাংলা শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়। যেমন–
- গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি।
- বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।
ব্যতিক্রম: কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন- এ মাটি সোনার বাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া)
২. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে, সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন–
- তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান।
- পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান।
৩. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন-
- পদ্মফুল গোলাপের চাইতে বেশি সুন্দর।
- ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী।
- কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট।
তৎসম শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তম’ যোগ হয়। যেমন–
- গুরু- গুরুতর- গুরুতম
- দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম
২. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ঈয়স’ প্রত্যয় যুক্ত হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
- লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ
- অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ
- বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ
- শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ
সর্বনাম পদ
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে। যেমন: রহিম ভাল ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যায় ।
সর্বনাম পদগুলো সব বিশেষ্য বা নামের পরিবর্তে বসতে পারে বলে এদেরকে ‘সর্বনাম’ বলে।
সর্বনাম পদের প্রকারভেদ
সর্বনাম পদগুলোকে মূলত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা
- আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজ, খোদ, আপনি
- সামীপ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি
- দূরত্ববাচক : ঐ, ঐসব, সব
- সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ
- প্রশ্নবাচক : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে
- অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : কোন, কেহ, কেউ, কিছু
- ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর
- সংযোগজ্ঞাপক : যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা
- অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর
সর্বনামের পুরুষ
বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পুরুষভেদে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষণ ও অব্যয় পদের কোন পুরুষভেদ নেই। পুরুষ ৩ প্রকার। সুতরাং, সর্বনাম পদের পুরুষও ৩টি-
উত্তম পুরুষ: বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।
মধ্যম পুরুষ: বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি।
নামপুরুষ: বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।
সাপেক্ষ সর্বনাম
কখনও কখনও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন-
- যত চাও তত লও (সোনার তরী)
- যত চেষ্টা করবে ততই সাফল্যের সম্ভাবনা।
- যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা।
- যত গর্জে তত বর্ষে না।
- যেই কথা সেই কাজ।
- যেমন কর্ম তেমন ফল।
- যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।
ক্রিয়াপদ
যে পদ দ্বারা কোনো কিছু করা বা কোনো কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে। যেমন:
- বাবা এসেছেন।
- আমি অঙ্ক করছি।
ক্রিয়াপদের প্রকারভেদ
১. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: বিথু গান গায়।
২. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ হয় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন :
- আমি বাড়ি গিয়ে………
- সে বই নিয়ে……..
৩. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন:
- স্বপন চিঠি লিখছে।
- কাঞ্চন বই পড়ছে।
৪. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম থাকে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন:
- স্বপন লিখছে।
- কাঞ্চন পড়ছে।
প্রয়োগ-বৈশিষ্ট্যে সকর্মক ক্রিয়া অকর্মক ক্রিয়া হতে পারে। যেমন:
সকর্মক ক্রিয়া | অকর্মক ক্রিয়া |
১. আমি টিফিন খেয়েছি। | ১. আমি টিফিনে খেয়েছি। |
২. মাখন রায় গান গাচ্ছে। | ২. মাখন রায় গানে মজেছে। |
৫. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন:
- শিক্ষক ছাত্রদের বাংলা পড়াচ্ছেন।
- মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন।
৬. প্রযোজক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া অন্যের দ্বারা চালিত হয়, তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন:
- মা খোকাকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
- সাপুড়ে সাপ খেলায়।
৭. যৌগিক ক্রিয়া: একটি সমাপিকা ক্রিয়া ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া মিলিত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন:
- সে পাস করে গেল।
- সাইরেন বেজে উঠল।
৮. মিশ্র ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন-
- বিশেষ্যের পরে: আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। গোল্লায় যাও।
- বিশেষেণের পরে: তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম।
- ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে: মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।
অব্যয় পদ
যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়।
যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায় তাকে অব্যয় পদ বলে।
উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় পদ রয়েছে। যেমন:
১. বাংলা অব্যয় শব্দ: আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
২. তৎসম অব্যয় শব্দ: যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি। ‘এবং’, ও ‘সুতরাং’ তৎসম শব্দ হলেও বাংলায় এগুলোর অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে। সংস্কৃতে ‘এবং’ শব্দের অর্থ ‘এমন’ আর ‘সুতরাং’ অর্থ ‘অত্যন্ত’, ‘অবশ্য’। কিন্তু এবং-ও (বাংলা), সুতরাং-অতএব (বাংলা)
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ: আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি।
অব্যয়ের প্রকারভেদ
অব্যয় পদ মূলত ৪ প্রকার-
- ১. সমুচ্চয়ী অব্যয়
- ২. অনন্বয়ী অব্যয়
- ৩. অনুসর্গ অব্যয়
- ৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
সমুচ্চয়ী অব্যয়
সমুচ্চয়ী অব্যয়: যে অব্যয় পদ একাধিক পদের বা বাক্যাংশের বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। এই সম্পর্ক সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন যে কোনটিই হতে পারে। একে সম্বন্ধবাচক অব্যয়ও বলে।
সমুচ্চয়ী অব্যয় আবার নানা রকমের হতে পারে। যেমন:
সংযোজক অব্যয় : উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়)
তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। (তাই অব্যয়টি ‘তিনি সৎ’ ও ‘সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে’ বাক্য দুটির মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে।
এরকম– ও, আর, তাই, অধিকন্তু, সুতরাং, ইত্যাদি।
বিয়োজক অব্যয় : আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। (আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।)
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। (‘মন্ত্রের সাধন’ আর ‘শরীর পাতন’ বাক্যাংশ দুটির একটি সত্য হবে, অন্যটি মিথ্যা হবে।)
এরকম– কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি।
সংকোচক অব্যয়: তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। (এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।)
এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি।
অনন্বয়ী অব্যয়
যে সব অব্যয় পদ নানা ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
- উচ্ছ্বাস প্রকাশে : মরি মরি! কী সুন্দর সকাল!
- স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে : হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না।
- সম্মতি প্রকাশে : আমি আজ নিশ্চয়ই যাব।
- অনুমোদন প্রকাশে : এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো।
- সমর্থন প্রকাশে : আপনি তো ঠিকই বলছেন।
- যন্ত্রণা প্রকাশে : উঃ! বড্ড লেগেছে।
- ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে : ছি ছি, তুমি এতো খারাপ!
- সম্বোধন প্রকাশে : ওগো, তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।
- সম্ভাবনা প্রকাশে : সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে।
- বাক্যালংকার হিসেবে : কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজ মনে।
অনুসর্গ অব্যয়
যেসব অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির কাজ করে, এবং কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। অর্থাৎ, যেই অব্যয় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন-
ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (এখানে ‘দিয়ে’ তৃতীয়া বিভক্তির মতো কাজ করেছে, এবং ‘ওকে’ যে কর্ম কারক, তা নির্দেশ করেছে। এই ‘দিয়ে’ হলো অনুসর্গ অব্যয়।)
অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
বিভিন্ন শব্দ বা প্রাণীর ডাককে অনুকরণ করে যেসব অব্যয় পদ তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে। যেমন-
- বজ্রের ধ্বনি- কড় কড়
- তুমুল বৃষ্টির শব্দ- ঝম ঝম
- স্রোতের ধ্বনি- কল কল
- বাতাসের শব্দ- শন শন
- চুড়ির শব্দ-টুং টাং
- নূপুরের আওয়াজ- রুম ঝুম
- সিংহের গর্জন- গর গর
- ঘোড়ার ডাক- চিহি চিহি
- কোকিলের ডাক- কুহু কুহু
অনুভূতিমূলক অব্যয়ও অনুকার অব্যয়ের শ্রেণিভুক্ত। যেমন- ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতাবাচক), খাঁ খাঁ (শূন্যতাবাচক), কচ কচ, কট কট, টল মল, ঝল মল, চক চক, ছম ছম, টন টন, খট খট ইত্যাদি।
কতগুলো অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হলে নামবিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ ও বিশেষণীয় বিশেষণের অর্থবাচকতা প্রকাশ করে থাকে। এদের অব্যয় বিশেষণ বলা হয়।