তামিম আহমেদ
তামিম আহমেদ
15 Mar 2024 (2 months ago)
আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ

বাংলা শব্দ গঠন পদ্ধতি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)


Listen to this article

Contents

শব্দ গঠন

অর্থপূর্ণ ধ্বনিসমষ্টিকে বলা হয় শব্দ। মনের ভাব প্রকাশের জন্য একাধিক ধ্বনি একত্র হয়ে কোনো অর্থ প্রকাশ করলে তবেই তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু শব্দের গঠন ও গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সামগ্রিকভাবে সবশ্রেণির শব্দগুলোকে চিহ্নিত করে এগোতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ-এ বাক্যে মুখ্যত ব্যাকরণগত ভূমিকা অনুযায়ী বাংলা শব্দের শ্রেণিবিন্যাকে আমলে নেয়া যায়। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে মোট আটটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

যেমন– ১. বিশেষ্য; ২. সর্বনাম; ৩. বিশেষণ; ৪. ক্রিয়া; ৫. ক্রিয়া-বিশেষণ; ৬. যোজক; ৭. অনুসর্গ ও ৮. আবেগ শব্দ।

এ আট প্রকার শব্দের গঠন প্রক্রিয়াগুলো দেখানোই আমাদের আলোচ্য বিষয় হতে পারে। তার আগে উপর্যুক্ত শব্দ শ্রেণিগুলোকে একটি শাখাচিত্রে উপস্থাপন করা যাক।

এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, এ শব্দশ্রেণি নির্ধারণ মূলত অর্থনির্ভর, যদিও রূপতত্ত্বের অন্যান্য মানদণ্ডও একই সঙ্গে লক্ষ করা হবে। এ ধরনের শ্রেণিবিভাগ কখনোই নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ হয় না, কারণ বাক্যে প্রতিবেশ বিশেষে অনেক শব্দের ভূমিকা পরিবর্তিত হতে পারে। ‘অর্থবাহী’ শব্দগুলোকে অর্থের প্রয়োজনেই বাক্যে ব্যবহার করা হয়। বাক্যের মূল সংবাদবস্তু এ শব্দগুলোতে বাহিত হয়। ব্যাকরণিক শব্দগুলোরও নিশ্চয়ই এক ধরনের অর্থ আছে। কিন্তু তাদের কাজ প্রধানত ব্যাকরণের। মনে রাখতে হবে, বাক্যে শব্দগুলোর একক কোনো ভূমিকা নেই, একক বা সম্মিলিতভাবে পদবন্ধ নির্মাণ করেই সেগুলো বাক্যের বৈধ উপাদান হয়ে ওঠে।

এবারে বিভিন্ন শ্রেণির শব্দের গঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা যাক। শব্দগঠন মানেই হলো সাধিত শব্দের গঠন প্রক্রিয়া। পৃথিবীর সকল ভাষার শব্দগঠনের উপায়গুলোকে নিচের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনে রূপগত উপায়গুলোই প্রধান। এগুলোতে শব্দমূলে সাধারণভাবে এক বা একাধিক রূপ যুক্ত হয়ে পূর্ণ শব্দ গঠন করে। কখনো কোনো প্রত্যয় যুক্ত হয়ে, কখনো বা আর-একাধিক পূর্ণ শব্দের যোগে সমাস প্রক্রিয়ায়।

১. বিশেষ্য গঠন

সাধিত বিশেষ্য নানাভাবে গঠিত হতে পারে। যেমন-

(ক) আদ্যপ্রত্যয় উপসর্গযোগে

যেহেতু উপসর্গও এক ধরনের আদ্যপ্রত্যয়, তাই উপসর্গযোগে গঠিত সব শব্দই আদ্যপ্রত্যয়জাত শব্দ। উদাহরণ:

. উপ + কূল = উপকূল- এরূপ – পরিষেবা/পরিসেবা, সংবিধান, প্রকৌশল ইত্যাদি। [বস্তুতপক্ষে বাংলায় যে কুড়িটি সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয় ব্যবহৃত হয় তাতে গঠিত শব্দগুলোর অধিকাংশই তৎসম শব্দ]

. শব্দের আগে একাধিক আদ্যপ্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। উদাহরণ: অন্ + অধি + কার (কৃ+অ)= অনধিকার;

অ + পরা + ভূত (ভূ+ক্ত) = অপরাভূত।

আদ্যপ্রত্যয় বা উপসর্গযোগে সমাস ও শব্দের অর্থ পরিবর্তন

উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠনের মূলত সমাস-প্রক্রিয়ায় শব্দের অর্থের নানারকম পরিবর্তন ঘটতে পারে।

পরিবর্তনের ধরনাগুলো হচ্ছেঃ

  • ১. শব্দের অর্থের প্রসার: পূর্ণ > পরিপূর্ণ
  • ২. শব্দের অর্থের সংকোচন: গ্রহ > উপগ্রহ
  • ৩. শব্দের অর্থের পরিবর্তন: মান > অপমান

[উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে]

আদ্যপ্রত্যয় বা উপসর্গের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা আদ্যপ্রত্যয়গুলো হচ্ছে: অ-, অঘা, অজ, অনা-, আ-, আড়-, আন-, আব-, ইতি, উন- (উণা), কু-, নি-, পাতি-, ভর-, রাম, স-, সা-, হা-। শব্দগঠনের সময়ে এসব আদ্যপ্রত্যয়ের কোনো কোনোটি আলাদা আলাদা অর্থের দ্যোতনা দেয়। এখানে বাংলা আদ্যপ্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দগঠনের উদাহরণ দেখানো হলো:

আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
অ-নয় ও মন্দতাঅবাঙালি, অমিল, অকেজো
অঘা-বোকাঅঘারাম, অঘামূর্খ
অজ-নিতান্ত (মন্দ)অজপুকুর, অজমূর্খ
অনা-মন্দতা, অদ্ভুত, অভাবঅনাচার, অনামুখো, অনাসৃষ্টি, অনাবৃষ্টি
আ-অভাব, মন্দতাআধোয়া, আলুনি, আগাছা
আড়-বাঁকা, প্রায়আড়খ্যাপা, আড়পাগলা, আড়মোড়া
আন-নয়, বিক্ষিপ্তআনকোরা, আনচান, আনমনা
আব-অস্পষ্টতাআবছায়া, আবডাল
ইতি-এ বা এরইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বে
উন-কমঊনপাঁজুরে
কু-মন্দতাকুকাজ, কুকথা, কুনজর
নি-নাই, নেতিনিখুঁত, নিখরচা, নিখাদ
পানি-ক্ষুদ্রপাতিলেবু, পাতিহাঁস
ভর-পূর্ণভরদুপুর, ভরপেট, ভরসন্ধ্যে
রাম-বড়, উৎকৃষ্টরামছাগল, রামদা, রামচর
সা-উৎকৃষ্টসা-জিরা, সা-জোয়ান
হা-অভাবহাঘরে, হাপিত্যেশ, হাভাতে

বাংলায় সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয়যোগে শব্দগঠনের বহু উদাহরণ আছে। এখানে অর্থদ্যোতনাসহ সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দগঠনের উদাহরণ দেয়া গেল।

আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দসমূহ
পরাবিপরীত, আতিশষ্যপরাজয়, পরাভব, পরাশক্তি
অপবিপরীত, অপকর্ষ, দূরীকরণঅপকার, অপমান, অপসারণ
সম্ ~ [সং, সঙ, সঞ্চ, সন্]সন্নিবেশ, সম্যক, অভিমুখী, আতিশয্যসংকলন, সংযোজন, সংহতি, সমর্থন, সমাদর, সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ
নিআধিক্য, পুরাপুরি, নিচেনিপীড়ন, নিদারুণ, নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ, নিবিষ্ট, নিবারণ, নিপাত, নিক্ষেপ
অবনিম্নমুখিতা, মন্দ, সম্যকঅবতরণ, অবনতি, অবমাননা, অবক্ষয়, অবজ্ঞা
অনুপরে, নিরন্তরতা, অভিমুখী, সাদৃশ্যঅনুকরণ, অনুসরণ, অনুক্ষণ, অনুশীলন, অনুকূল, অনুলিপি
নিঃ ~ [নির, নিশ্, নিষ, নিস্]অভাব, বিশেষভাবে, বহির্মুখিতানিরক্ষর, নিরপরাধ, নিশ্চয়, নিষ্পন্ন
দুঃ ~ [দুর্,দুশ্, দুষ, দুস্]মন্দ, অভাব, কঠিন, আধিক্যদুঃসময়, দুর্নাম, দুশ্চিন্তা, দুষ্কার্য, দুস্তর
বিসম্যক, বিপরীত, ভিন্ন অভাবঅধিনায়ক, অধিপতি, অধিকার
অধিপ্রধান, মধ্যেসুকণ্ঠ, সুসংবাদ, সুতীব্র
সুভালো, সহজ, আতিশয্যসুকণ্ঠ, সুসংবাদ, সুতীব্র
উৎ ~ [উদ্, উন্‌]উপরের দিক, অপকর্ষ, আতিশয্যউত্তোলন, উন্নতি, উদ্বোধন
পারিচতুর্দিক, সম্পূর্ণভাবেপরিক্রমা, পরিতৃপ্ত, পরিত্যাগ
প্রতিবিপরীত, সাদৃশ্যপ্রতিদান, প্রতিচ্ছবি, প্রতিদিন, পৌণঃপুনিকতা
উপনিকট, অপ্রধান, সম্যকউপকূল, উপভাষা, উপভোগ
পর্যন্ত, ঈষৎআকণ্ঠ, আনত

অন্য ভাষার আদ্যপ্রত্যয়

আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে বেশি কিছু আদ্যপ্রত্যয় বাংলায় এসেছে। সেগুলোর কোনো কোনোটি মূল উচ্চারণে কোনো কোনোটি বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে অর্থদ্যোতনাসহ অন্যভাষার আদ্যপ্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দগঠনের কিছু উদাহরণ দেখানো হলো :

ক. ফারসি আদ্যপ্রত্যয়
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
কারকাজকারখানা, কারসাজি
খোশআনন্দদায়কখোশগল্প, খোশমেজাজ
দরকম, নিম্নস্থদরকাঁচা, দরদালান, দরপাট্টা
নানয়নাচার, নারাজ, নাপাক
নিমঅবি বা প্রায়নিমখন, নিমরাজি
ফিপ্রত্যেকফি-বছর, ফি-হপ্তা
সহ বা সঙ্গেবমাল, বকলম
বদমন্দ, উগ্রবদখেয়াল, বদনাম, বদমেজাজ
বেনেই, খারাপ, ভিন্নবেআদব, বেআক্কেল, বেহুঁশ
খ. আরবি
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
আমসর্বসাধারণআমদরবার, আমজনতা, আমরাস্তা
খাসব্যক্তিগতখাসকামরা, খাসমহল, খাসদখল
লানা (নেই, ভুল)লাওয়ারিশ, লাখেরাজ, লাপাত্তা
গরনা (নেই, ভুল)গরমিল, গরহাজির, গররাজি
গ. ইংরিজি উপসর্গ
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
আমসর্বসাধারণআমদরবার, আমজনতা, আমরাস্তা
খাসব্যক্তিগতখাসকামরা, খাসমহল, খাসদখল
লানা (নেই, ভুল)লাওয়ারিশ, লাখেরাজ, লাপাত্তা
গরনা (নেই, ভুল)গরমিল, গরহাজির, গররাজি
ঘ. উর্দু-হিন্দি আদ্যপ্রত্যয়
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
হারপ্রত্যেক, বিভিন্নহররোজ, হরকিসিম

(খ) অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে শব্দগঠন

অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে বিশেষ্য শব্দগঠনের প্রক্রিয়া দু ধরনের:

  • ১. ধাতুর সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে।
  • ২. বিশেষ্যের/শব্দের সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে।

১. ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য গঠন

ধাতুর সঙ্গে দুধরনের অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠিত হয়।

  • ক. সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে
  • খ. বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে।
ক. ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে বিশেষ গঠন:
ক্রিয়ামূলসংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়
অকপাঠ + অক = পাঠক
অকগায় + অক = গায়ক
অকগ্রাহ + অক = গ্রাহক
অনজ্বল + অন = জ্বলন
অনগম + অন = গমন
অনশয় + অন = শয়ন
তাদা + তা = দাতা
তাগ্রহ + তা = গ্রহীতা
তাবক + তা = বক্তা
তিদীপ্ত + তি = দীপ্তি
তিকৃত + তি = কৃতি
তিভীত + তি = ভীতি
বরভাস্বর + বর = ভাস্বর
বরঈশ্বর + বর = ঈশ্বর
বরযাযা + বর = যাযাবর

এ প্রক্রিয়া মূলত সংস্কৃত রূপতত্ত্বের অংশ।

খ. ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠন :
ক্রিয়ামূলবাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়
অক, অকাচড়ক, মোড়ক, ঝলক, হলকা, ছিলকা
অতমানত, ফেরত, বসত
অতা, অতি, তা, তিপড়তা, গুনতি, ভরতি, পড়তি
অন্ফোড়ন, ফলন, ঝাড়ন
অনাবাজনা, খেলনা, বাটনা
অনি/ওনিনাচনি, ঢাকনি, চালনি
উনিনাচুনি, ছাউনি, চিরুনি
অলপিতল, পিছল, ফাটল
আ/ওয়াশোনা, দেখা, যাওয়া, খাওয়া
আইঢালাই, বাছাই, লড়াই
আত্(<আইত)স্যাঙাতা, ডাকাত
আওচড়াও, ফলাও, ঘেরাও
আনোদেখানো, শোনানো, ভাবানো
আরি/উরিকাটারি, পূজারি, ডুবুরি
হাসি, কাশি, ঝুলি
মোড়ক, টনক, চড়ক
কা/কিকৌচকা, টপকা, ফসকা
কিটুসকি, ভরকি, মুড়কি

২. বিশেষ্যের সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে সাধিত বিশেষ্য গঠন

বিশেষ্যের সঙ্গে যেসব অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য গঠিত হয় সেগুলোকে তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয় বলা চলে।

সংস্কৃতি তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠন:
সংস্কৃতি অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষ্য
অকবালক, সার্থক, শিক্ষক
আয়নদ্বৈপায়ন, বাৎস্যায়ন
রাবণি, দাশরথি
ইকগ্রন্থাগারিক, নাবিক, সাংবাদিক
ইমাকালিমা, নীলিমা, মধুরিমা
ছত্রক, পঞ্চম, পুত্রক
তাএকতা, দরিদ্রতা, শত্রুতা
ত্বকর্তৃত্ব, নেতৃত্ব, দায়িত্ব

এগুলো সংস্কৃতি ব্যাকরণ প্রক্রিয়ার অংশ, বাংলা রূপতত্ত্বের অন্তর্গত নয়।

বাংলা তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠন:
অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষ্য
থালা, চাকা
আইচড়াই, উতরাই, নিতাই
আচকানাচ, কোনাচ
আচিঘামাচি, ব্যাঙাচি
আতডাকাত, স্যাঙাত
আনিআমানি, নাকানি
আনোজুতানো, বেতানো, হাতানো
আমি/-আমোন্যাকামি/ন্যাকামো, পাগলামি/পাগলামো
আরকামার, চামার, কুমার
আরিকাঁসারি, ভিখারি, শাঁখারি
আল/আলোদাঁতাল/দাঁতালো, ধারাল/ধারালো
চুলি, তেলি, তাঁতি (বৃত্তিজীবী বা দক্ষ অর্থে)
ডাক্তারি, মাস্টারি, মোক্তারি (পেশা/বৃত্তি অর্থে)
কাঠি, ছুরি, ঘটি (ক্ষুদ্র অর্থে)
খুকু, ছোটু, মামু
এ (<ইয়া)জেলে, নেয়ে, মুটে
ঢোলক, দমক, বালক
মাথট, লেঙ্গট
টিছিপটি, সুখটি, শুখাটি
ড়ারাজড়া, খাগড়া, চামড়া
ড়িআঁকড়ি, জুয়াড়ি, ঝিউড়ি
নিকামরনি, গয়লানি, ডাক্তারনি
পনাগিন্নিপনা, দুরন্তপনা, বেহায়াপনা
অন্যান্য তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন:
অন্যান্য তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়শব্দ উদাহরণ
আনা/আনিবাবুয়ানা/বাবুয়ানি, মুনশিয়ানা, সাহেবিয়ানা
ওয়ানগাড়োয়ান, কোচোয়ান, দারোয়ান
ওয়ালাফেরিওয়ালা, বাড়িওয়ালা, পয়সাওয়ালা
খানাছাপাখানা, ডাক্তারখানা, বৈঠকখানা
খোরগাঁজাখোর, ঘুষখোর, হারামখোর
গরকারিগর, বাজিগর, সওদাগর
গিরিকেরানিগিরি, দাদাগিরি, মাঝিগিরি
চা/চিবাগিচা, ডেকচি, ব্যাঙাচি
চিতবলচি, বাবুর্চি, মশালচি
দান/দানিআতরদান/ আতরদানি, ছাইদান/ছাইদানি
দারজমিদার, দোকানদার, পাহারাদার
-নবিসনকলনবিস, শিক্ষানবিস, হিসাবনবিস
বন্দিজবানবন্দি, নজরবন্দি, সারিবন্দি
বাজিগলাবাজি, ধোঁকাবাজি, বোমাবাজি
স্তানআফগানিস্তান, পাকিস্তান, হিন্দুস্তান

(গ) সমাসের সাহায্যে বিশেষ্য গঠন

দ্বন্দ্ব বা বন্ধন সমাসের সাহায্যে

  • ১. বিশেষ্য-বিশেষ্য শ্রেণির দ্বন্দ্ব সমাসের সাহায্যে: কাগজ-কলম, ফলমূল, বইপত্র।
  • ২. ক্রিয়া বিশেষ্য-ক্রিয়া বিশেষ্য শ্রেণির দ্বন্দ্ব সমাসের সাহায্যে: আসা-যাওয়া, ওঠা-বসা, খাওয়া-পরা।
  • ৩. বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাসের সাহায্যে: কাঠ-খড়-কোরোসিন, তেল-নুন-লকড়ি, রোগ-শোক-জরা-মৃত্যু।

কর্মধারয় বা বর্ণন সমাসের সাহায্যে

  • ৪. সাধারণ কর্মধারয় বা বর্ণন সমাসের সাহায্যে: কাঁচকলা, আলুসিদ্ধ, ডাক্তার সাহেব।
  • ৫. উপমিত বর্ণন সমাসের সাহায্যে: চাঁদমুখ, চরণকমল, পুরুষসিংহ।
  • ৬. রূপক বর্ণন সমাসের সাহায্যে: জ্ঞানলোক, কালস্রোত, জীবনযুদ্ধ।
  • ৭. মধ্যপদলোপী বর্ণন সমাসের সাহায্যে: শিক্ষামন্ত্রী, জয়পতাকা, পরিচয়পত্র।

তৎপুরুষ বা কারকলোপী সমাসের সাহায্যে

  • ৮. কর্মতৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: চুক্তি সম্পাদন, নারী-নির্যাতন, পদত্যাগ।
  • ৯. নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: এতিমখানা, মালগুদাম, সভামঞ্চ।
  • ১০. সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: দেশসেবা, বিশ্বকবি, শয়নকক্ষ।
  • ১১. উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: জলচর, নাট্যকার, জাদুকর।

বজ্রীহি বা অন্যার্থক সমাসের সাহায্যে

  • ১৩. ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাসের সাহায্যে: কাড়াকাড়ি, গলাগলি, মারামারি।

২. সর্বনাম গঠন

বাংলা ভাষার সর্বনামগুলোকে ভাষায় প্রাপ্ত বা সিদ্ধ শব্দ বলেই ধরে নেয়া ভালো। কিন্তু আমি, তুমি, তুই, আপনি, তিনি, ইনি, উনি-এ সিদ্ধ রূপগুলোর শেষে ‘ই’ ধ্বনিটি থাকায়, মনে হয় ‘ই’ একটি প্রত্যয় হিসেবে যুক্ত হয়ে এভাবে এ কর্তৃপদগুলো গঠন করেছে:

  • আম্ + ই = আমি
  • তোম্ + ই = তুমি
  • তো + ই = তুই
  • আপন + ই = আপনি
  • তেন + ই = তিনি
  • ওন + ই = উনি
  • এন্ + ই = ইনি

কোনো কোনো সর্বনাম গঠিত হয়েছে স্বরোচ্চতাসাম্য (স্বরসংগতি) ও ধ্বনিলোপের মাধ্যমে। যেমন:

  • তোম্ + ই > তুমি (স্বরোচ্চতাসাম্য)
  • আপন্ +ই > আপনি (ধ্বনিলোপ)

সর্বনামের একবচনের মূলের সঙ্গে ‘রা’ যুক্ত হয়ে বহুবচন হয়:

  • আম্ + রা = আমরা
  • তোম্ + রা = তোমরা
  • তো + রা = তোরা
  • আপন + রা = আপনারা

সম্বন্ধবাচক সর্বনাম গঠনে একবচনে ‘র’ ও বহুবচনে ‘দের’ যুক্ত হয়। তবে তার আগে মধ্যপ্রত্যয় ‘আ’ যুক্ত হয়ে সম্বন্ধবাচক সর্বনামের শব্দমূল তৈরি হয়। যেমন:

  • (আম্ + আ >) আমা- + র = আমার
  • আমা- + দের = আমাদের
  • (তোম্ + আ >) তোমা- + র = তোমার

৩. বিশেষণ গঠন

সাধিত বিশেষণ গঠিত হতে পারে। যেমন: আদ্যপ্রত্যয়, অন্ত্যপ্রত্যয়, সমাস ও সংখ্যা শব্দের সাহায্যে এবং ধ্বন্যাত্মক শব্দের ভিত্তিতে।

আদ্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন

বাংলা সাধিত বিশেষণ গঠনে তিন ধরনের আদ্যপ্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • ১. সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয়,
  • ২. বাংলা আদ্যপ্রত্যয়,
  • ৩. অন্যান্য আদ্যপ্রত্যয়।

১. সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ) যোগে বিশেষণ গঠন

আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ)বিশেষণ গঠন
উৎউৎকণ্ঠ, উত্তল, উত্তাল
দুঃদুরাত্মা, দুশ্চর, দুষ্কর
নিঃনিরক্ষর, নিশ্চিন্ত, নিষ্কর
বিবিচিত্র, বিকল, বিকল্প

২. বাংলা আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ) যোগে বিশেষণ গঠন

বাংলা আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ)বিশেষণ গঠন
ভরভরদুপুর, ভরপেট, ভরসন্ধ্যে
হাহাঘরে, হাভাতে

৩. অন্যান্য আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ) যোগে বিশেষণ গঠন

অন্যান্য আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ)বিশেষণ
নানারাজ, নাখোশ, নাহক
বদবদনসিব, বদমেজাজি, বদরাগী
বেবেআদম, বেহিসেব, বেঠিক
লালাওয়ারিশ, লাজবাব

অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন

বাংলা সাধিত বিশেষণ গঠনে তিন ধরনের অন্ত্যপ্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • ১. সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়,
  • ২. বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়,
  • ৩. অন্যান্য অন্ত্যপ্রত্যয়।

সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে বিশেষণ গঠন

দুটি প্রক্রিয়ায় সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠিত হয়। যেমন:

  • ১. ধাতুর সঙ্গে
  • ২. শব্দের সঙ্গে।
ধাতুর সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় (কৃৎপ্রত্যয়) যোগে বিশেষণ গঠন
ধাতুর সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষণ
অনীয়করণীয়, নিন্দনীয়, শোচনীয়
ইতকুণ্ঠিত, চলিত, লিখিত
ইষ্ণচলিষ্ণু, ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু
বাদী (সত্যবাদী), কারী (উপকারী), স্থায়ী
জিজ্ঞাসু, লিঙ্গু, পিপাসু
জলজ, মনোজ, সহজ
খ্যাত, জ্ঞাত, মৃত
তব্যজ্ঞাতব্য, দাতব্য, দ্রষ্টব্য
মানদৃশ্যমান, চলমান, ম্রিয়মাণ
গণ্য, মান্য, যোগ্য
ভদ্র, ক্ষুদ্র, নম্র
শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় (শব্দ প্রত্যয়) যোগে বিশেষণ গঠন
শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষণ
ইকদৈহিক, ভৌগোলিক, ষান্মাসিক
ইতঅঙ্কুরিত, ক্ষুধিত, লজ্জিত
ইমঅগ্রিম, অন্তিম, রক্তিম
ইলজটিল, ফেনিল, পঙ্কিল
ইষ্ঠগরিষ্ঠ, লঘিষ্ঠ
ঈ (<ইন্‌)গুণী, ধনী, সাহসী
ঈনকুলীন, অভ্যন্তরীণ, সর্বজনীন
ঈয়জলীয়, কেন্দ্রীয়, রাষ্ট্রীয়
ঈয়সীগরীয়সী, ভূয়সী, বর্ষীয়সী
এয়গাঙ্গেয়, আগ্নেয়, আতিথেয়
তনপুরাতন, চিরন্তন, সনাতন
তমক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম, বিংশতিতম
তরক্ষুদ্রতর, বৃহত্তর, প্রবলতর
বৎবন্ধুবৎ, মাতৃবৎ, শত্রুবৎ
বতীগুণবতী, দয়াবতী, রূপবতী
বান্জ্ঞানবান, ধনবান, বিবেকবান
বিধনানাবিধ, বহুবিধ, ত্রিবিধ
বী (< বিন্)তেজস্বী, মায়াবী, যশস্বী
পঞ্চম, সপ্তম, দশম
ময়জলময়, প্রীতিময়, বৈচিত্র্যময়
আদ্য, গ্রাম্য, ন্যায্য
মাংসল, শীতল, বহুল

এগুলো মূলত সংস্কৃত ব্যাকরণেই গঠিত হয়েছে। বাংলায় এগুলো গোটা শব্দরূপেই গৃহীত। ব্যুৎপত্তি জানার জন্য আমাদের সংস্কৃত ব্যাকরণেরই দ্বারস্থ হতে হয়।

বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন

দুটি প্রক্রিয়ায় বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠিত হয় যেমন:

  • ১. ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া প্রত্যয়,
  • ২. শব্দের সঙ্গে শব্দ প্রত্যয় যোগ করে।
ধাতুর সঙ্গে বাংলা ক্রিয়া প্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন
ধাতু + সঙ্গী প্রত্যয়বাংলা ক্রিয়া
অন্তউড়ন্ত, চলন্ত, ঝুলন্ত
কেনা (বই), শোনা (কথা), ফোটা (ফুল)
আনোওঠানো (জিনিস), গোছানো (ঘর), জমানো (টাকা)
আল্মাতাল (লোক), মিশাল (বোল)
উকনিন্দুক, লাজুক, মিশুক
উনিকাঁদুনি, নাচুনি, সাজুনি
ওয়াকাঁচোয়া, লাগোয়া
তিচলতি (বই), ঘাটতি (বাজেট), বাড়তি (তহবিল)
শব্দের সঙ্গে শব্দ প্রত্যয়যোগে বিশেষণ নির্মাণ
শব্দ প্রত্যয়বিশেষণ
চোর + আচোরা
কাল + আকালা
পশ্চিম + আপশ্চিমা
খাড়া + আইখাড়াই
বাছা + আইবাছাই
চোলা + আইচোলাই
মাঝা + আরিমাঝারি
রকমা + আরিরকমারি
ধারা + আলোধারাল/ধারালো
জোরা + আলোজোরাল/জোরালো
পাটা + আলিপাটালি (গুড়)
সোনা + আলিসোনালি (ফসল)
রূপা + আলিরূপালি (পর্দা)
গোলাপ + ইগোলাপি
পশম + ইপশমি
ইরান + ইইরানি
জরুর + ইজরুরি
(কাজ) + ইকাজি
সরকার + ইসরকারি
উঁচ + উউঁচু
নীচ + উনীচু
চাল + উচালু
পেটু + উক্পেটুক
লাজু + উক্লাজুক
মিশু + উক্মিশুক
উত্তুর + এউত্তুরে (হাওয়া)
মেট + এমেটে (মসজিদ)
গেঁয় + এগেঁয়ো (যোগী)
ভূত + উড়েভূতুড়ে
হাত + উড়েহাতুড়ে
কেঠ + ওকেঠো
ঝোড় + ওঝোড়ো (হাওয়া)
বুন + ওবুনো (মোষ)
পুঁচ + কেপুঁচকে (ছেলে)
ছিঁচ + কেছিঁচকে (চোর)
নীল + চেনীলচে
লাল + চেলালচে
ঘোলা + টেঘোলাটে
ঝগড়া + টেঝগড়াটে
ধোঁয়া + টেধোঁয়াটে
তুখো + ড়তুখোড়
ত্যাঁদ + ড়ত্যাঁদড়
চাঁদ + পানাচাঁদপানা
খোকা + পানাখোকাপানা
মোটা + পানামোটাপানা
দিন + ভরদিনভর
রাত + ভররাতভর
মাস + ভরমাসভর
গুণ + বন্তগুণবন্ত
প্রাণ + বন্তপ্রাণবন্ত
লক্ষ্মী + মন্তলক্ষ্মীমন্ত
বুদ্ধি + মন্তবুদ্ধিমন্ত
মেঘ + লামেঘলা
পাত + লাপাতলা
পাত + লাপাতলা
ভ্যাপ + সাভ্যাপসা
আলস + সেআলসে
পান + সেপানসে

সমাসের সাহায্যে বিশেষণ গঠন

দ্বন্দ্ব বা বন্ধন সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
বিশেষণ-বিশেষণউঁচু-নীচু, কম-বেশি, জানা-শোনা

কর্মধারয় বা বর্ণন সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
বিশেষণ – বিশেষণকাঁচা-পাকা, চালাক-চতুর, মিঠে-কড়া
উপমানমিশকালো, অরুণরাঙা, হিমশীতল

তৎপুরুষ বা কারকলোপী সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
কর্মকারকলোপীক্ষণস্থায়ী, দীর্ঘস্থায়ী চিরবঞ্চিত
করণকারকলোপীআইনসংগত, ঢেঁকিছাটা, ঘটনাবহুল
অপাদান কারকলোপীহাতছাড়া, বিদেশাগত, রোগমুক্ত
অধিকরণ কারকলোপীজলমগ্ন, ঝুড়িভরতি, বস্তপচা
উপপদ কারকলোপীগাঁটকাটা, ঘরপোড়া, হাড়ভাঙা
অলুক কারকলোপীকলে-ছাঁটা, তাঁতে-বোনা, বানে-ভাসা
না-কারকলোপীঅনাবাদি, বে-আইনি। [আদ্যপ্রত্যয়যুক্ত]

বজ্রীহি বা অন্যার্থক সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
সাধারণ অন্যার্থকঅল্পবয়সি, লেজকাটা, ঠোঁটকাটা
ব্যধিকরণ অন্যার্থকখড়ম-পেয়ে, ক্ষণজন্মা, বোঁটা খসা
না- অন্যার্থকঅনন্ত, বেপরোয়া, বেহায়া
সহার্থক অন্যার্থকসকরুণ, সচিত্র, সস্নেহ
সংখ্যাবাচক অন্যার্থকদশহাতি, একমণি, চারপেয়ে
অলুক অন্যার্থকচশমা-নাকে, ছাতা-হাতে, জুতো-পায়ে

সংখ্যাশব্দের সাহায্যে বিশেষণ গঠন

সংখ্যাশব্দ অংশে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

ধ্বন্যাত্মক শব্দের সাহায্যে বিশেষণ গঠন

ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো দুই ধরনের:

১. মৌলিক ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ: সোঁ সোঁ (ঝড়), শনশন (হাওয়া), দুরুদুরু (বুক), ভুরভুর (গন্ধ)।

২. সাধিত ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ: এ (ইয়া) অন্ত্যপ্রত্যয়যুক্ত হয়ে এগুলো গঠিত হয়। যেমন- ক্যাটকেটে (রং), ফুটফুটে (জ্যোৎস্না), ভুলভুরে (গন্ধ), টুকটুকে (রং), মুচমুচে (চানাচুর)।

৪. ক্রিয়া গঠন:

বাংলা ক্রিয়া গঠন প্রক্রিয়ার একটি দিক হচ্ছে ক্রিয়াপদ গঠন। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে প্রকার, কাল, অনুজ্ঞা, পক্ষ, অসমাপিকা ইত্যাদি বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। এছাড়া সিদ্ধ ধাতুর সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে সাধিত ধাতু গঠন করা হয়ে থাকে। এখানে সাধিত ও ক্রিয়াবিশেষ্য গঠনের দিকটি দেখানো হলো। বাংলায় সাধিত ধাতু দুরকম- প্রযোজক ধাতু ও নামধাতু, দুটিই গঠিত হয়- আ প্রত্যয় যোগ করে, কিছুটা এভাবে:

অপ্রযোজক ধাতু + আ-প্রযোজক ধাতুক্রিয়াবিশেষ্য
দো + আ-দেওয়া-দেওয়ানো
যা + আ –যাওয়া-যাওয়ানো
দ্যাখ্ + আ –দেখা-দেখানো
ভোগ্‌ + আ –ভোগা-ভোগানো
শেখ্ + আ –শেখা-শেখানো
বিশেষ্য/বিশেষণ + আ-নামধাতুক্রিয়াবিশেষ্য
ঘুম + আ –ঘুমাঘুমানো
দণ্ড > দাঁড় + আ –দাঁড়াদাঁড়ানো
সাঁতার + আ –সাঁতরাসাঁতরানো
পিছল + আ –পিছলাপিছলানো
চমক + আ –চমকাচমকানো

৫. ক্রিয়া বিশেষণ গঠন

গঠনের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণ দু ধরনের মৌলিকসাধিত

  • মৌলিক ক্রিয়া বিশেষণ : আস্তে, টানা, দ্রুত, সিধে, সোজা ইত্যাদি।
  • সাধিত ক্রিয়া বিশেষণ : সাধিত ক্রিয়া বিশেষণ গঠনের দিক থেকে দু ধরনের হতে পারে।

ক. একপদী ক্রিয়া- বিশেষণ : ঘরে, বাড়িতে, এভাবে;

খ. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ : ভালো করে, ভালোয় ভালোয়, বাড়ি থেকে পালিয়ে।

ক. একপদী ক্রিয়া- বিশেষণ গঠন

  • এ- বিভক্তি বা য়- বিভক্তি যোগ : ঘরে, বাগানে, দূরে, বাসায়, রাস্তায়
  • তে – বিভক্তিযোগে : পানিতে, বাড়িতে, মাটিতে
  • এ – বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : ওপরে, কাছে, নিচে, পাশে, পিছনে, ভিতরে, মধ্যে, সামনে ইত্যাদি।

সমাসের মাধ্যমে

এ ধরনের ক্রিয়া- বিশেষণ নানাভাবে হতে পারে। যেমন সমার্থক বা বিপরীতার্থক পূর্বক্রিয়ার ক্রিয়ার অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের মাধ্যমে দেখেশুনে, দিয়েথুয়ে, ধুয়েমুছে, নেড়েচেড়ে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে, বুঝেশুনে, ভেবেচিন্তে, রেখেঢেকে, লিখেপড়ে, শুয়েবসে, হেসেখেলে ইত্যাদি।

সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দের অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের মাধ্যমে: ওপরে নিচে, কাছে দূরে, সামনে পিছনে ইত্যাদি।

দ্বিরাবৃত্তির মাধ্যমে: কাছাকাছি, কোণাকুণি, খোলাখুলি, তাড়াতাড়ি, দেখাদেখি, পাশাপাশি, মাঝ-মাঝি, মুখোমুখি, সরাসরি, সোজাসুজি ইত্যাদি।

বিশেষণ + ভাবে: এভাবে, সেভাবে, ক্লান্তভাবে, বিষণ্ণভাবে, ভালোভাবে, মসৃণভাবে, মৃদুভাবে, রাগতভাবে, লজ্জিতভাবে ইত্যাদি।

খ. বহুপদী ক্রিয়া-বিশেষণ গঠন

বহুপদী ক্রিয়া-বিশেষণ নানাভাবে গঠিত হয়ে থাকে। যেমন:

১. যুক্ত ক্রিয়া + এ (<ইয়া) : উপকার করে, কসম খেয়ে, চোখ পাকিয়ে, মাথা তুলে, হাত চালিয়ে, হিসাব করে ইত্যাদি।

২. অনুসর্গজাত ক্রিয়া বিশেষণের দ্বিত্ব ঘটিয়ে : পাশে পাশে, পিছনে পিছনে, মধ্যে মধ্যে, মাঝে মাঝে, সঙ্গে সঙ্গে ইত্যাদি।

৩. বিশেষ্যের দ্বিত্ব ঘটিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে-এ/-য়/অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে : দিনে দিনে, সকাল সকাল, সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় ইত্যাদি।

৪. বিশেষণের দ্বিত্ব ঘটিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে-এ/-য় অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে : টাটকা টাটকা, ভালোয় ভালোয় ইত্যাদি।

৫. তুলনাবাচক অলংকার প্রয়োগ করে : ঝড়ের মতো, বিদ্যুৎগতিতে, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো, শ্যাওলার মতো, হরিণের মতো ইত্যাদি।

৬. সম্বন্ধ পদ + এ-যুক্ত অনুসর্গ: এঁদো গলির ভিতরে, টেবিলের ওপরে, আছাড় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, মনের গভীর থেকে ইত্যাদি।

৭. অসমাপিকায় দ্বিত্ব ঘটিয়ে: কাশতে কাশতে, গাইতে গাইতে, দেখতে দেখতে, বলতে বলতে, শুনতে শুনতে ইত্যাদি।

৮. অসমাপিকায় দ্বিত্বের মধ্যে না-পদাণু যুক্ত করে : দাঁড়াতে -না – দাঁড়াতে, দেখতে না-দেখতে, বলতে-না-বলতে, বুঝতে না বুঝতে, লিখতে – না- লিখতে ইত্যাদি।

৯. অসমাপিকায় শেষ হওয়া বাক্যকল্প (clause) ব্যবহার করে: আশায় আশায় বসে থেকে, ঘর থেকে দপা ফেলে, বাড়ি থেকে পালিয়ে, সারাটি দিন বিছানায় গড়িয়ে ইত্যাদি।

৬. যোজক গঠন

প্রমিত বাংলায় যেসব যোজক শব্দের ব্যবহার হয় সেগুলো মৌলিক শব্দ, গঠিত বা সাধিত শব্দ নয়। এ শব্দগুলোর মধ্যে সংস্কৃতের শব্দঋণ বেশকিছু আছে- এবং তথা, কিন্তু, বরং পরন্ত তথাপি, তত্রাচ, অথবা, কিংবা অতএব ইত্যাদি যোজক শব্দগুলোকেও দুভাগে ভাগ করা যায় ১. ‘সাধারণ’ যোজক ও ২. ‘বিশেষ’ যোজক।

সাধারণ যোজক গুলো পদবন্ধ এবং বাক্য উভয়কে যোগ করে মাত্র, দুয়ের সম্পর্কের মধ্যে কোনো অর্থগত জটিলতা আনে না। কিন্তু বিশেষ যোজক গুলোতে মূলত দুটি বাক্যের যোগ ঘটনায়, আবার সেই সঙ্গে বিশেষ যোজকগুলো নানা ধরনের অর্থেরও বাহন হয়ে উঠে এবং প্রথম বাক্যটিকে নানাভাবে সংকীর্ণ বা বিস্তারিত করে।

কিন্তু, তবু, তবুও, বরং, পরন্ত, নতুবা, হয়… না-হয়, যদি… তবে, তবে কিনা, তথাপি, অতএব, তাহলে ইত্যাদি
অথচ, তত্রাচ, না, বা, কিংবা, অথবা, নইলে…

৭. অনুসর্গ

বাংলা ব্যবহৃত অনুসর্গগুলো মৌলিক শব্দ হিসেসেই গণ্য করা চলে। এগুলোর অধিকাংশের গঠনে অধিকরণ বিভক্তি ‘এ’ যুক্ত হয়েছে। যেমন-

শব্দঅধিকরণ বিভক্তি
ওপরওপরে
কাছকাছে
দিকদিকে
নিচনিচে
মাঝমাঝে
পক্ষপক্ষে
পাশপাশে
পিছনপিছনে
সঙ্গসঙ্গে
সাথসাথে
সামনাসামনে

দু’ সারির শব্দই অভিধানে ভুক্তি লাভ করেছে। এছাড়া কিছু অনুসর্গ রয়েছে যেগুলোকে বলা যায় ক্রিয়াজাত অনুসর্গ। যেমন: ‘বলে’, ‘হতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’, ‘নিয়ে’। এগুলোর রূপে পূর্ব ক্রিয়ার অসমাপিকার রূপের সঙ্গে অভিন্নতা রয়েছে। তবে দুয়ের ব্যাকরণগত ভূমিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূর্বক্রিয়া ক্রিয়ার অর্থ ত্যাগ করে না এবং বাক্যের মধ্যে দুটি ঘটনার যোজক হিসেবে কাজ করে- ‘তুমি পানি ছাড়া ওখানে যেতে পারবে না।’ কিন্তু ‘এতগুলো পচা ডিম নিয়ে আমি যে কী করি’-তে ‘নিয়ে’ অনুসর্গ মাত্র।

৮. আবেগ শব্দগঠন

আবেগ শব্দগুলোও সাধারণভাবে মৌলিক শব্দ, এগুলো নির্মিত বা সাধিত শব্দ নয়। মৌলিক আবেগ শব্দগুলো ধ্বনিগত তীব্র আবেগের উচ্চারণ মাত্র, পূর্ণাঙ্গ অর্থবাহী শব্দ নয়। যেমন: ধুৎ, ধুস্, ধ্যাৎ, ভ্যাট্, ফাট্, হ্যাট, হুশ্, উঁহু, অ্যাঁ, ইস্, (ইশ), ফুশ্, উহ্, আহ্ ইত্যাদি।

কিছু আভিধানিক শব্দ ও ক্রিয়াপদ তীব্র আবেগে উচ্চারিত হয়েও আবেগের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। দুর! থাম্! যাঃ! ভাগ্‌! ফোট্! মর্! পালা! ছাড়ু! রাখ! হট্‌! ইত্যাদি এগুলো মূলত তাড়নসূচক অনুজ্ঞা-ক্রিয়াপদের আবেগাশ্রিত ব্যবহার মাত্র। যেমন: ‘চাপ!’ মূলত ‘চুপ কর’- এ অনুজ্ঞা ক্রিয়াপদের তীব্র আবেগময় প্রকাশ।

শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে শব্দগঠন

বাংলা ভাষার শব্দনির্মাণের এলাকায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত আর- একটি উপায়- শব্দের দ্বিত্ব। এ ধরনের দ্বিত্বের (কখনো-বা শব্দদ্বিত্ব বলতে শুধু একই শব্দের বা পদের পুনরাবৃত্তি বোঝায় না। শব্দদ্বিত্বের প্রক্রিয়া বিচিত্র। এব শাখাচিত্র এরকম হতে পারে।

শব্দদ্বিত্বের শ্রেণিবিভাগ

শব্দদ্বিত্বকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: যেমন:

  • ১. প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব
  • ২. পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দদ্বিত্ব

১. প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে সমাসবদ্ধ দুটি শব্দের একটি অন্যটির প্রতিধ্বনির মতো যেমন: অলিগলি, বইটই। এ জাতীয় শব্দদ্বিত্বের শব্দ দুটি পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে।

প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব তিন ধরনের হতে পারে:

  • ক. অনুকারের মাধ্যমে
  • খ. ব্যঞ্জন বিকল্পনের মাধ্যমে
  • গ. স্বরবিকল্পনের মাধ্যমে।

ক. অনুকারের মাধ্যমে

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বের একটি অংশ অর্থবহ, অন্য অংশ আপাত অর্থহীন। এগুলো গঠনের দিক থেকে দ্বন্দ্ব বা বন্ধন সমাসের মতো। যেমন: চাকর-বাকর, চাকরি-বাকরি, বাসন-কোসন, ফাঁকি-ঝুঁকি, পোশা-আশাক, হাঁড়ি-কুঁড়ি, । কখনো কখনো আপাত নিরর্থক শব্দটি অনুচর না থেকে আগে এসে বসে, যেমন- অলিগলি, সুলুক-সন্ধান।

খ. ব্যঞ্জন বিকল্পনের মাধ্যমে শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বের দ্বিতীয় শব্দের প্রথমে প্রথম শব্দের আদ্য ব্যঞ্জনের অর্থহীন প্রতিধ্বনি ঘটে। যেমন: আম-টাম, লুচিফুচি, চাকর-বাকর, এলোমেলো, রকম-সকম ইত্যাদি।

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে ব্যঞ্জন বিকল্পন কয়েক রকম হতে পারে। যেমন:

ট-বিকল্পন

অঙ্ক-টঙ্ক, অভ্যাস-টভ্যাস, আম-টাম, ইট-টিট, উপায়-টুপায়, একটা-ট্যাকটা, কাগজ-টাগজ, খরচ-টরচ, গোরু-টোরু, ঘর-টর, চাল-টাল, ছাগল-টাগল, জ্বর-টর, ঝাল-টাল, তাল-টাল, থাকা-টাকা, দর-টর, ধুলো-টুলো, নিন্দে-টিন্দে, পাশ-টাশ, ফল-টল, বাড়ি-টারি, ভয়-টয়, মার-টার, রাজা-টাজা, লাভ-টাভ, শাসন-টাসন, ষাঁড়-টাঁড়, সম্মান-টম্মান, হুকুম টুকুম ইত্যাদি।

তবে আদ্যব্যঞ্জনেই যদি ট্ থাকে, তাহলে প্রতিধ্বনি হিসাবে ফ্ ব্যঞ্জনটির আগম ঘটে। যেমন- টাটু-ফাটু, টাইম-ফাইম, টাকা-ফাকা।

ব-বিকল্পন

চুলবুল, আগডুম বাগডুম, চাকর-বাকর, হড়বড়, তড়বড়, গড়বড়।

ম-বিকল্পন

এলোমেলো, লুচি-মুচি, ঘুষো-মুষো, তেল-মেল।

লক্ষণীয়: ‘ঝলমল’, ‘ঝিকিমিকি’, ‘কচরমচর’, ‘খচমচ’, ‘খচরমচর’ সম্পূর্ণত ধ্বন্যাত্মক।

স্(শ্)-বিকল্পন

গুটিশুটি, গুটিয়ে-গুটিয়ে, জড়োসড়ো, গল্পসল্প, বুড়োসুড়ো, গল্পে-সপ্পে (গোপ্পে-শোপ্পে), মোটাসোটা, রকম- সকম, বড়োসড়ো, অল্পসল্প, নরম-সরম, মুড়িসুড়ি, বোকাসোকা, আঁটোসাঁটো, বুদ্ধিশুদ্ধি, বোধশোধ।

অন্যান্য বিকল্প

আবড়া-থাবড়া, উসখুস, উশকো-খুশকো, নটখট, নজ-গজ, হাঁস-ফাঁস, আই-ঢাই, কাঁচু-মাচু, অলি-গলি, নিশ-পিশ, উলুক-ঝুলুক, আবোল-তাবোল, এবড়ো-থেবড়ো, এবড়ো-থেবড়ো, ছটফট, হিজিবিজি, হাবিজাবি, ফষ্টিনষ্টি, আঁকুপাঁকু, হাঁচোড়পাঁচোড়, নটখট, হম্বিতম্বি, হ্যানো-ত্যানো, হইচই, হাকোচ-পাকোচ, হুডুম-দুড়ুম।

গ . স্ববিকল্পনের মাধ্যমে শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে দ্বন্দ্বে সমাসের মতো সংগঠিত দুটি শব্দে দ্বিতীয়টি প্রথমটির হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না। প্রথমটির ব্যঞ্জনগুলো দ্বিতীয়টিতে পুনরাবৃত্ত হয়, কিন্তু স্বরগুলো হয় না, একই ব্যঞ্জনগুচ্ছ ভিন্ন একটি বা দুটি স্বরধ্বনির আশ্রয়ে গ্রন্থিত হয়।

এগুলো ধ্বন্যাত্মক এবং অর্ধ-ধ্বন্যাত্মক দু ভাগে ভাগ করা যায়।

ক. অর্ধ-ধ্বন্যাত্মক: টুং-টাং, ঠুং-টাং, টুপ-টাপ, টুপুর-টাপুর, টাপুর-টুপুর, টুক্-টাক্, খুছু-খাচ্, ধুপ-ধাপ, হুপ্-হাপ্, দুপ্-দাপ্, চুঁশ্টাশ, ঝুঝাপ, ঝাপুর-ঝুপুর, দুড়-দাড়, দুডুম্-দাড়ম্, খুট-খাট্, খুটুর-খাটুর, খুসুর-খাসুর, দুম্-দাম, ধুমুশ্-ধামুশ্, ধুপুশ্-ধাপুশ্, হাপুস্-হুপুস্, ফিস্-ফাস্, ফুস্-ফাস্, ফুসুর-ফাসুর, ছিম্-ছাম্, হুট-হাট্, ভুটভাট (পেট ভুটভাট করছে), ছ্যাঁক-ছোঁক।

খ. ধ্বন্যাত্মক: অর্ধধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বন্দ্বে দ্বিতীয় অংশটি নিরর্থক, অর্থাৎ ধ্বন্যাত্মক। যেমন- টুকরো-টাকরা, খুচরো-খাচরা, সাফসুফ, জোগাড়-জাগাড়, প্যাঁচ-পোঁচ, চুপচাপ, ঘুষ-ঘাস, ফিট্-ফাট্, তুক-তাক, টুকরো-টাকরা, ডাক-ডোক, দাগ-দোগ, ফাঁক-ফোঁক (র), ভিড়-াড়, মিট-মাট, গোছ-গাছ, মোট-মাট, কালো-কালো, ধার-ধোর, ভুল-ভাল, ঢাকা-ঢুকি, ঢিলে-ঢালা, ঠিক-ঠাক ইত্যাদি।

২. পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে প্রথম শব্দটিই আর একবার আবৃত্ত হয়, তার ফলে এক ধরনের ‘যমজ’ শব্দের সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষায় এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে বহুবিধ বৈচিত্র্য দেখা যায়।

এ ধরনের দ্বিত্ববত গঠন প্রধানত দুরকম: ধ্বন্যাত্মক এবং অর্থাত্মক। অর্থবাহী শব্দের দ্বিত্বে যেমন অর্থের বিপুল বৈচিত্র্য দেখা যায় ধ্বন্যাত্মক শব্দের দ্বিত্বে সে বৈচিত্র্য জাগে না। খুব বেশি হলে ধ্বনিটির পুনরাবৃতি্ বা প্রলম্বন বোঝায়, যেমন- সাঁ, সাঁ সাঁ।

ক. ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্ব:

এ ধরনের দ্বিত্বে ধ্বন্যাত্মক ধ্বনির পুনরাবৃত্তি বা প্রলম্বন ঘটে। কখনও বা তাতে বহুত্বের অর্থ যুক্ত হয়। যেমন:

  • সাঁ করে তিরটা ছুটে গেল।
  • সাঁ সাঁ করে তীরগুলো ছুটে গেল।
  • সাঁ সাঁ সাঁ সাঁ করে তীর ছুটে যাচ্ছে।

মুখের কথা সাঁ কথাটির আঁ ধ্বনিটির প্রলম্বন হতে পারে: ‘সাঁ-করে তীরটা ছুটে গেল’।

ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্বের গঠন

ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্বের গঠন কয়েক রকম হতে পারে। যেমন:

  • ১. ধ্বন্যাত্মক ধ্বনি বা শব্দের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে,
  • ২. ধ্বন্যাত্মক শব্দযুগলের মাঝখানে আ-এর আগম ঘটিয়ে,
  • ৩. ধ্বন্যাত্মক শব্দের যমজ গঠন প্রক্রিয়া।
১. ধ্বন্যাত্মক ধ্বনি বা শব্দের পুনরাবৃত্তি বা দ্বিত্ব

আঁক্-আঁক্, ইস্-ইস্, উহ্-উহ্, কুটকুট, কোঁতকোঁত (করে গেলা), কুটুস্-কুটুস্, খক্-খক্, খুটখুট, খুটুর-খুটুর, খ্যাঁক্-খ্যাঁক্, ঘ্যাঁক্-ঘ্যাঁক্, ঘেউ ঘেউ, ছি-ছি, হ্যা-ছ্যা, ছ্যাঁক-ছ্যাঁক, ঝাট, টুংটুং, ঠুকঠুক, ঠুকুস্-ঠুকুস্, ঠকর-ঠকর, ডুগডুগ, ঢংঢং, থপ্নপৃ, থুথুপ, দুমদুম্, দুপদুপ্ত, ধুপধুপু, ধুপুর ধুপুর, ফট্‌ফট্ ফোঁসফোঁস্, ভটক্ষট্, ভেঁস্, ভোঁস্, শোঁ-শোঁ, সাঁ-সাঁ, সাঁই-সাঁই, হুশ্-হুশ্, হুম্, হিম্-হিস্।

মুখের কথায় এ দ্বিত্বের একক শব্দটিকে পৃথকভাবে পাওয়া যায়, যেমন:

  • কুট করে কামড়ে দিল।
  • কোঁত করে গিলে ফেলল।
  • মাছটা ফুটন্ত তেলে ফেলতেই ছ্যাঁক করে আওয়াজ হলো।

দ্বিত্বের ফলে ধ্বনিটির পুনরাবৃত্তি বা ব্যাপ্তি বোঝায়।

২. ধ্বন্যাত্মক শব্দযুগলের মাঝখানে আ-এর আগম (insertion)

এ ধরনের কোনো কোনো ধ্বন্যাত্মক শব্দে প্রথম অংশের পরে আ-এর নিধান ঘটার ফলে আর-এক ধরনের অব্যাহত ব্যাপ্তির অর্থ সূচিত হয়। যেমন কপ্‌কপ্‌ >কপাকপ্, খচ্‌খচ্‌, > ,খচাখচ্, খপ্‌খপ্‌ > খপাখপ্‌, গব্‌গব্‌ > গবাগব্‌ ঝট্‌ঝট্‌ >ঝটাঝট্‌, ঝন্‌ঝন্ > ঝনাঝন, ফট্‌ফট > ফটাফট্, ভট্‌ভট্‌ > ভটাভট। এরকম দমাদম্, পটাপট, খটাখট

কখনোও মুখের কথায় পুনরাবৃত্ত শব্দের আদ্যব্যঞ্জনটির দ্বিত্বও ঘটে। যেমন ঝটাট, দমাদ্‌দম, কড়াক্কড় (বাজের শব্দ,), ভটাব্‌ভট, পটাপ্পট, গবাগ্‌গব, কপাক্কপ।

ধ্বন্যাত্মক শব্দের পুনরাবৃত্তি দুয়ের বেশি হতে পারে বক্তার অভিপ্রায় অনুযায়ী। যেমন ‘ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর চলছেই’।

‘শোঁ শোঁ শোঁ শোঁ-হাওয়ার সে কী আওয়াজ!’

৩. ধ্বন্যাত্মক শব্দের যজম গঠন প্রক্রিয়া

এ ধরনের ধ্বন্যাত্মক শব্দ গঠনের রূপের দিক থেকে যমজ, অর্থাৎ দুটি সমান উপাদানে গঠিত বলে মনে হয়। ফলে এগুলোর অর্ধাংশ কোনো অর্থের প্রকাশ করে না। অর্ধাংশের একক প্রয়োগও হয় না। যেমন: ক্যাটক্যাট, কুতকুত, (কালো) কুচকুচ, গজগজ, গজরগজর, গুজুরগুজুর, গনগন, গুনগুন, ঘ্যানঘ্যান, ঘ্যানরঘ্যানর, ঘুটঘুট, ঘসঘস, চকচক, চিকচিক, জুলজুল (করে তাকানো), ঝকঝক, ঝিকমিক, ঝিরঝির, ঝমঝম, ঝমর-ঝমর, ঝুমঝুম, টরটর (করে কথা বলা), টুকটুক (লাল-) টসটস (রস-করছে), তকতক, তিরতির (-করে কাঁপছে), থকথক, থিকথিক, প্যাটপ্যাট, ফুঁকফুঁক, ফুসফুস, ফুসুর-ফুসুর, ভনভন, ভ্যাজরভ্যাজর, লকলক, সরসর (-করে কী একটা চলে গেল)।

খ. অর্থাত্মক: শব্দের দ্বিত্ব

এ ধরনের দ্বিত্বশব্দ অর্থবহ শব্দের পুনরাবৃত্তি বা দ্বিত্ব প্রয়োগ বোঝায়। গঠনের দিক থেকে এ ধরনের শব্দগঠন দু ধরনের হতে পারে।

  • (ক) বিভক্তিচিহ্নহীন শব্দের পুনরাবৃত্তি।
  • (খ) বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি।
(ক) বিভক্তিচিহ্নহীন শব্দের পুনরাবৃত্তি

বিশেষ্য বিশেষণ সর্বনাম ক্রিয়াবিশেষণ-সব ধরনের পদেরই বিভক্তিহীন পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায়, নানা অর্থে, যেমন:

  • ১. উদ্ধৃতিসূচক (quotative): ‘জাত জাত করেই দেশটা গেল!’, কলম কলম করছিলে এতক্ষণ, এই নাও তোমার কলম!’, ‘সকাল থেকে মা মা বলে কাঁদছে ছেলেটা!’, ‘সর্বক্ষণ আমি আমি করে লোকটা’, ‘ভালো ভালো করেই ওর মাথাটা খেলে’।
  • ২. ব্যাপ্তি ও বহুত্ব: ‘যাও, বাড়ি বাড়ি (=বাড়িতে বাড়িতে) গিয়ে কথাটা জানিয়ে এসো!, ‘দেশ দেশ ঘুরে শেষে এই বগুড়ায় বাসা নিলে?’, কত কত লোক দেখেছি, তোমার মতো কঞ্জুস দেখিনি।’, ‘এরকম খারাপ খারাপ কথা বললে এ রফা থেকে বার করে দেব।’, ‘বাগানে প্রচুর লাল লাল ফুল ফুটেছে।’, ‘দুর্নীতিবাজরাই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।’
  • ৩. বারংবারতা ও পুনরাবৃত্তি: ‘হঠাৎ হঠাৎ অমন চমকে দাও কেন?’, ‘জলদি জলদি কাজগুলো সেরে ফেলো।’
  • ৪. নৈকট্য (Proximity): ‘এরকম ওপর-ওপর কথায় কিছু বোঝা যায় না।’, ‘ভাসা-ভাসা জ্ঞান’, ‘উডু- উড়ু মন’, ‘দুঃখী দুঃখী মুখ’, ‘বোকা বোকা কথা’, ‘পাগল-পাগল ভাব’, ‘ঘুম-ঘুম চোখ’, ‘উদাস-উদাস দৃষ্টি।’
  • ৫. পূর্ণতা (fullness): ‘গরম গরম চা’, ‘টাটকা টাটকা খবর’, ‘ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা থাকতে থাকতে খেয়ে নাও।’ বলা বাহুল্য, একই প্রয়োগ প্রতিবেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। যেমন, ‘গরম গরম বক্তৃতা’ একাধিক বক্তৃতা বোঝায়, কিন্তু ‘গরম গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নাও’ বোঝায় পূর্ণতা বা পূর্ণ গরম অবস্থা আবার ‘গা-টা গরম-গরম লাগছে’ নৈকট্যের অর্থ ইঙ্গিত করে।
  • ৬. বিভক্তিহীন সর্বনাম :
  • ক. কণ্টিত বহুত্ব বা ব্যাপ্তি অর্থে: কখন কখন, কে কে, যে যে, কবে কবে, সেই সেই।
  • খ. উদ্ধৃতিসূচক : ‘ওই ওই’ (বলে চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটি)! ‘তুমি তুমি!’ (লোকটি আর কিছু বলতে পারল না)। ‘আমি আমি’ করা।
(খ) বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি

বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি, অর্থাৎ পদের পুনরাবৃত্তি। বাংলায় নানা ধরনের বিভক্তি-যুক্ত পদেরই দ্বিত্ব ঘটে। তবে একদিকে বিশেষ্য ও সর্বনামের, এবং অন্যদিকে ক্রিয়াতে বিভক্তিযোগের ঘটনা ব্যাপক ঘটে বলে সেসব ক্ষেত্রে দ্বিত্বের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় বেশি। বিশেষ্যভিত্তিক অনুসর্গ পদ সাধারণভাবে-এ বিভক্তির যোগেই অনুসর্গ হয়ে ওঠে-সেগুলোর দ্বিত্বও ব্যাপকভাবেই ঘটে।

বাংলায় বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি নানা রূপের হয়ে থাকে। যেমন:

বিশেষ্য +র/এর: সাধারণভাবে বহুত্ব ও ব্যাপ্তি অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: দূরের দূরের যাত্রী, দোকানের দোকানের জিনিস, খেতের খেতের ফসল, মাসের মাসের মাইনে, মজার মজার কথা, দিনের দিনের হিসেব, বাড়ির বাড়ির ময়লা ইত্যাদি।

বিশেষ্য + এ: বিচ্ছিন্ন বহুত্ব ও ব্যাপ্তি ও নানার্থকতা প্রকাশ করে। যেমন: ঘরে ঘরে, ফাঁকে ফাঁকে, দেশে দেশে, ঝাঁকে ঝাঁকে, লোকে লোকে, হাটে হাটে, বাজারে বাজারে, গাছে গাছে, তারায় তারায়, ডালে ডালে, পাতায় পাতায়।

এগুলোর কিছু বিশিষ্ট প্রয়োগ দেখানো হলো:

  • ক. তাৎক্ষণিকতা: হাতে হাতে, চোখে চোখে, মুখে মুখে (কথা);
  • খ. অবিচ্ছেদ: পায়ে পায়ে (পরিক্রমা), সুরে সুরে, ছায়ায় ছায়ায়, ডাঙায় ডাঙায়, মেঘে মেঘে;
  • গ. স্থানিকতা: পেটে পেটে, তলায় তলায়, গোপনে গোপনে, ভিতরে ভিতরে, বাইরে বাইরে, পথে পথে;
  • ঘ. নৈকট্য: মাথায় মাথায়, গায়ে গায়ে, হাঁটুতে হাঁটুতে মাপে মাপে।

সর্বনাম + -কে: বহুত্ব বোঝায়। যেমন কাকে কাকে খেতে বলেছে? যাকে যাকে বলেছে তার তার কাছে যেন কার্ড পৌছায়।

সর্বনাম+-র/-এর
  • উদ্ধৃতিসূচক: সারাক্ষণ আমার আমার করে লোকটা।
  • বহুত্ব: নিজের নিজের মালের দিকে নজর রাখবেন। যার যার শোক, তার তার সান্ত্বনা। কার কার কাছে টাকা আছে?
বিশেষণ ও সংখ্যাশব্দ + এ/তে
  • ব্যাপ্তি: ভালোয় ভালোয় (বিশেষ্য-প্রয়োগ);
  • সংখ্যা বিশেষণে বহুত্ব: হাজারে হাজারে, লাখে লাখে, শয়ে শয়ে, কোটিতে কোটিতে;
  • যোগ: একে একে (দুই), দুয়ে দুয়ে (চার), দশে দশে (কুড়ি);
  • অনুবর্তন: একে একে সবাই এসে জুটল।
অনুসর্গ + এ (বিশেষ্যমূলক অনুসর্গ)
  • ঈষদ্ভাব: কাছে কাছে, পাশে পাশে, পিছনে পিছনে, সামনে সামনে।
  • বণ্টিত ব্যাপ্তি: মাঝে মাঝে, মধ্যে মধ্য, দিকে দিকে।
ক্রিয়া (ধাতু) + সামান্য বর্তমান
  • ঊষদ্ভাব, উন্মুখতা ও নৈকট্য: যায় যায়, মরে মরে, (তখন সন্ধ্যা) হয়-হয়, পড়ে-পড়ে, ধরি ধরি।
  • উদ্ধৃতিসূচক : আসি আসি! এত তাড়া কিসের? যাই যাই! বার বার ডাকাডাকির দরকার নেই।

প্রলম্বন বা টানা পুনরাবৃত্তি অর্থে কখনো মধ্যে সংযোজক ‘আর’ বসিয়ে ক্রিয়ার দ্বিত্ব হয়। যেমন: ভাবে আর ভাবে, হাঁটে আর হাঁটে, গড়ায় আর গড়ায়, চলে আর চলে।

এ অর্থেই মাঝখানে ‘তো’ বসিয়েও কোনো কোনো ক্রিয়ার দ্বিত্ব ঘটে। যেমন: বসে আছে তো আছেই। কখনো দ্বিতীয় ক্রিয়াটি যৌগিক ক্রিয়ার রূপ নেই ‘খায় তো খেয়েই যায়,’ ‘গায় তো গেয়েই চলে।’ ‘কাঁদে তো কেঁদেই চলে।’

অসমাপিকা ক্রিয়া
  • পূর্বক্রিয়া: অনবচ্ছিন্নতা বা পুনরাবৃত্তিসূচক- বলে বলে, গিয়ে গিয়ে, শুনে শুনে, ডেকে ডেকে, ভেবে ভেবে।
  • নিমিত্তার্থক: তাৎক্ষণিকতা ও সমব্যাপ্তি বোঝায়; দেখতে দেখতে, বলতে বলতে ক্রিয়ার প্রলম্বন ও পুনরাবৃত্তি বোঝাতে হাঁটতে হাঁটতে, ভাবতে ভাবতে, শুনতে শুনতে, লিখতে লিখতে। কখনো কখনো মধ্যে একটি ‘না’-এর নিধান ঘটিয়ে তাৎক্ষণিকতাকে প্রবলতা দেওয়া হয়- দেখতে না দেখতে, শুনতে না শুনতে, ভাবতে না ভাবতে, বসতে না বসতে, চাখতে না চাখতেই।
ক্রিয়া + ঘটমান, পুরাঘটিত বর্তমান
  • মূলত উক্তির উদ্ধৃতিসূচক: ‘যাচ্ছি যাচ্ছি’ করা, ‘হয়েছে হয়েছে’ (‘যথেষ্ট হয়েছে’ অর্থে), ‘দেখেছ, দেখেছ! লোকটা কী কাণ্ড করল।
  • অধৈর্যসূচক: ‘হয়েছে হয়েছে! এখন চুপ কর।’ ‘হচ্ছে হচ্ছে! তুমি একটু ধৈর্য ধর।’ ‘বুঝেছি বুঝেছি! আর বরতে হবে না’
  • নিশ্চয়তাসূচক: ‘মেরেছি মেরেছি! এখন কী করবি কর।’ ‘খেয়েছে খেয়েছে! ত নিয়ে এত রাগারাগির কী আছে?

মাঝখানে ‘তো’ বসিয়ে ঘটমান বর্তমান আর অতীতের ক্রিয়ার দ্বিত্বের এবং দ্বিতীয় ক্রিয়ায়ই প্রত্যয় যোগের, দৃষ্টান্তও পাই- ‘চলছে তো চলছেই, দেখছে তো দেখছেই, হাসছে তো হাসছেই।’

ক্রিয়া + সামান্য অতীত
  • উদ্ধৃতিসূচক: ‘গেল গেল!’ ‘মলাম-মলাম!’ ‘পালাল পালাল! ধর্, লোকটাকে!’ দৃষ্টি-আকর্ষণসূচক: ‘শুনলে শুনলে! লোকটা কী বলল?’ ‘দেখলে দেখলে! উনি কীভাবে উড়িয়ে দিলেন কথাটা!’
  • নিশ্চয়তা ও তাচ্ছিল্যসূচক দ্বিত্ব: “গিয়েছিল গিয়েছিল, তাতে এমন কী ক্ষতি হয়েছে।’ ‘বলেছিলাম বলেছিলাম! সে যখন বলেছিলাম তখন বলেছিলাম।’ ‘দেখল দেখল! তাতে কী এসে গেল?’ ‘ভাবল ভাবল! ও নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।’ ‘যেতাম যেতাম! তাতে কী হয়েছে! এখন তো আর যাই না!’ ‘চেয়েছিল চেয়েছিল। এখন ওসব কথা তুলে লাভ নেই।’ এক্ষেত্রেও দুটি ক্রিয়ার মধ্যে ‘তো’ বসতে পারে।
ক্রিয়া + ভবিষ্যৎকাল
  • উদ্ধৃতিসূচক: ‘সারাক্ষণ ‘খাব খাব’ করে।’ ‘যাব যাব করছ, উঠছ না কেন?’ নৈকট্য বা সামীপ্য: সন্ধ্যা তখন হবে- হবে। লোকটা মরব-মরব করছে (এখানে উদ্ধৃতিসূচক অর্থও আছে)।
  • নিশ্চয়তা ও আশ্বাসসূচক: ‘খাব খাব! আমার সময় হলেই খাব।’ ‘যাবে যাবে! এত তাড়া কিসের?’ ক্রিয়ার অনুজ্ঞা রূপের দ্বিত্ব
  • তিরস্কারসূচক: যাঃ যাঃ! যাও যাও! যান যান। ভাগ ভাগ! পালা পালা! ছাড় ছাড়! ছাড়ো ছাড়ো! ছাড়ুন ছাড়ুন!
  • অনুরোধের তীব্রতা: শোন্ শোনু! শোনো শোনো! শুনুন শুনুন। চলো চলো। ওঠো ওঠো! বোস বোস! রাখ রাখ! পালাও পালাও! লেখো লেখা! পড়ো পড়ো!

লক্ষ্য করতে হবে যে, শুধু ইচ্ছাত্মক (volitional) ক্রিয়ার ক্ষেত্রেই এ অনুরোধের তীব্রতার অর্থটি আসে। যে ক্রিয়া ইচ্ছাত্মক নয় সেগুলোতে এ অনুরোধের সুরটা আসে না, কোথাও কোথাও অভিশাপের অর্থ জাগে। যেমন- মর্ মর্! পড় পড়!

  • নির্বন্ধ, উপদেশ; ‘দেখো দেখো, আমি যা বলছি তাই হবে।’ ‘যেয়ো যেয়ো।’ ‘খেয়ো খেয়ো! পেট ভরে খেয়ো।’
  • প্রত্যুক্তির স্পর্ধাসূচক: ‘কাটিস কাটিস! আমার কথা না ফলে তবে আমার দু কানই কেটে নিস।’ ‘ভেবো ভেবো! জেলখানায় বসে যত পার ভেবো।
  • অধৈর্যসূচক: যাস্ যাস্! যেয়ো যেয়ো! যাবেন যাবেন! খেয়ো খেয়ো! বোলো বোলো! বলিস, বলিস! লিখো লিখো! ঘুমোবেন ঘুমোবেন!এসব ক্রিয়ার মধ্যে ‘যদি’ অর্থে ‘তো’-ও এসে বসতে পারে। বিশেষত ভবিষ্যতের রূপে: ‘যাবেন তো যাবেন!’ ঘুমোবেন তো ঘুমোবেন!’
  • অন্যপক্ষের অনুজ্ঞা: ‘যাক্ যাক্, এ নিয়ে আর ভেবো না’, ‘থাক্ থাক্ আমার প্রণাম করতে হবে না।’ ‘হয় হোক হোক, এ নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে।’
অসমাপিকা ক্রিয়ারূপের দ্বিত্ব

অসমাপিকা ক্রিয়া: ইয়া এ বিভক্তিযুক্ত পূর্বক্রিয়া

এ (ইয়া): বলে বলে, খেয়ে খেয়ে, দেখে দেখে, হেঁটে হেঁটে, বসে বসে, ভুলে ভুলে, ভেবে ভেবে, লিখে লিখে, শুয়ে শুয়ে। যেসব ক্রিয়া একটানা চলে সেগুলোর ক্ষেত্রেই প্রলম্বন অর্থ প্রধান হয়- সারাদিন শুয়ে শুয়ে কাটালি। কিন্তু’ যে সব ক্রিয়া একবারবদ্ধ, সেগুলোর ক্ষেত্রে বারংবারতা বা পুনরাবৃত্তির অর্থটিই প্রধান- আছাড়া খেয়ে খেয়ে, পিটিয়ে পিটিয়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে।

অসমাপিকা ক্রিয়া:-তে-অন্তক, নিমিত্তার্থক।

  • ক্রিয়াব্যক্তি: হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে, ভাবতে ভাবতে, শুনতে শুনতে, চলতে চলতে।
  • পুনরাবৃত্তিমূলক অর্থ: পেতে পেতে অভ্যেস হয়ে গেছে। শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে। দিতে দিতে ওর স্বভাব খারাপ করে দিয়েছিল।
  • ক্রিয়ার তাৎক্ষণিকতা ও অসমাপ্তি অর্থে: বলতে বলতে বাসটা ছেড়ে দিল। বসতে বসতে সভা শেষ। হাসতে হাসতে লোকটা হার্টফেল করল।
  • মাঝখানে ‘না’ পদাণুর (clitic) প্রয়োগ: বলতে না বলতে (ই), বসতে না বসতেই, লিখতে না লিখতেই (কাগজটা কেড়ে নিল), দাঁড়াতে না দাঁড়াতে (ই), ভাবতে না ভাবতে (ই)।
ক্রিয়াবিশেষণের দ্বিত্ব

ক্রিয়াবিশেষণের দ্বিত্ব সাধারণভাবে এককের অর্থটিকেই আরও স্পষ্টতা দেয় যেমন; আস্তে, কিন্তু আস্তে আস্তে, ধীরে, কিন্তু ধীরে ধীরে। জোরে কিন্তু জোরে জোরে। আবার বহুত্ব বা বারংবারতাও বেঝায়, যেমন- হঠাৎ হঠাৎ, কখন কখন, কখনো কখনো, বারে বারে, দিন দিন, রোজ রোজ, মাস মাস (মাসে মাসে), ঘণ্টায় ঘণ্টায়, সপ্তাহে সপ্তাহে, মুহূর্তে মুহূর্তে। ব্যাপ্তি অর্থে দিনে দিনে, রাতে রাতে, সকাল সকাল, সন্ধ্যায় সন্ধ্যায়।

আবেগ শব্দের দ্বিত্ব

আবেগ শব্দগুলোতে আভিধানিক শব্দ (যাঃ যাঃ, দূর দূর!) যেমন আছে তেমন আছে স্পষ্ট অর্থহীন কিন্তু ব্যঞ্জনাসিদ্ধ পদ, তেমন- দিক দিক! ছিঃ ছি! ছোঃ ছোঃ হ্যাট হ্যাট! ধ্যাত ধ্যাত! ভ্যাট ভ্যাট! ধুস ধুস!

পরামর্শ: ভাষার সব শব্দ তার ব্যাকরণ গঠন করতে হয় না। যে-কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারে কিছু শব্দ থাকে যা অখণ্ড বা অবিভাজ্য, অর্থাৎ যেগুলোর গঠনের ইতিহাস আমাদের কাছে মুছে গেছে, ফলে সেগুলো বর্তমান রূপেই ভাষায় প্রাপ্ত যেমন- হাত, পা, মাথা, ঘর, পথ, মানুষ, নদী, পেট, মুখ ইত্যাদি। এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় সরল (Simple) বা সিদ্ধ শব্দ।

আবার বহু শব্দের শরীরে তার গঠনের ইতিহাস চিহ্নিত থাকে, যেমন: ঢাকা + আই = ঢাকাই, ন্যাকা + আমি = ন্যাকাই, কুচুটে পনা = কুচুটেপনা, প্রতি উৎপদ + ত + মন্ + তি+ত্ব প্রত্যুৎন্নমতিত্ব, ধনুঃ + টং + কার = ধনুষ্টংকার। এ শব্দগুলোকে বলে Complex বা সাধিত শব্দ। এগুলোকে আরও ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে বোঝা যায় যে, সেই সব ক্ষুদ্র অংশগুলোর জুড়ে ও শব্দগুলোর প্রত্যেকটি গঠিত হয়েছে। ভাষায় মূলত সরল বা সিদ্ধ এবং জটিল বা সাধিত এ দুই ধরনের শব্দ থাকে। সব সাধিত শব্দের গঠনের প্রক্রিয়াটি স্পষ্ট নাও থাকতে পারে।

বাংলা শব্দভাণ্ডারে যত সাধিত শব্দ আছে তার সবকটির গঠন বাংলা ভাষাতে ঘটেনি। যেসব ভাষা থেকে আমরা শব্দ গ্রহণ করেছি (পরে শব্দভাণ্ডারের আলোচনা দেখুন) সেসব ভাষাতেই তার নিজস্ব ব্যাকরণে সেসব শব্দের অনেকগুলো গঠিত হয়েছে। যেমন: সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে ব্যুৎপন্ন হয়েছে ‘ব্যাকরণ’, ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’, ‘ঐশ্বরিক’ বা ‘পবর্তনাসুদেশ’, ‘পাণ্ডব’ বা ‘গ্রামান্তর’ জাতীয় শব্দ। তার অনেকগুলির গঠনের প্রক্রিয়া বাংলাভাষীর কাছে স্বচ্ছ বা স্পষ্ট নয় যে নিরক্ষর বাঙালি এর কিছু কিছু শব্দ মুখে ব্যবহার করেন) ‘ব্যাকরণ’, ‘নিরক্ষর’, ‘অলৌকিক’ ইত্যাদির ব্যুৎপত্তির বিবরণ তাঁর কাছে তো নেই-ই। শুধু সংস্কৃত থেকে নেওয়া শব্দাবলি নয়, ফরাসি ও আরবি থেকে আসা সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তি তার কাছে স্পষ্ট নয়, যেমন: স্পষ্ট নয় ইংরেজি বা পর্তুগিজ শব্দের ব্যুৎপত্তি। এমনকি বেশির ভাগ বাংলা সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তির ইতিহাসও বাঙালির কাছে স্পষ্ট নয়।

অনুশীলনমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: ১। শব্দ বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা শব্দ গঠিত হয় উদাহরণসহ লেখ। অথবা, শব্দ কাকে বলে? কী কী উপায়ে শব্দ গঠিত হয় উদাহরণসহ লেখ। অথবা, শব্দের সংজ্ঞা দাও। শব্দ গঠনের উপায়সমূহ উদাহরণসহ আলোচনা কর। অথবা, শব্দের সংজ্ঞা দাও। যেসব উপায়ে শব্দ গঠন করা যায় তা উদাহরণসহ বর্ণনা। [চ, বো,’১৭] [কু. বো, ‘০৮]

উত্তর: শব্দের সংজ্ঞা: এক বা তারও বেশি ধ্বনি বা বর্ণ মিলে যখন একটি অর্থ প্রকাশ পায় তখন তাকে শব্দ বলে। অর্থাৎ অর্থযুক্ত ধ্বনিকেই শব্দ বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: ড. মুহম্মদ এনামূল হকের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে অর্থবোধক হলে তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। শব্দ বলতে মানব কণ্ঠ নির্গত এবং এক বা একাধিক সার্থক (অর্থযুক্ত) ধ্বনিসমষ্টি বোঝায়।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোনো বিশেষ সমাজে নরনারীর কাছে যে ধ্বনির অর্থ স্পষ্ট আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নরনারীর ভাষার শব্দ।” এ অর্থে কেবল মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থপূর্ণ ধ্বনিই শব্দ।

ড. সুকুমার সেনের মতে, “অর্থবোধক একটি মাত্র বর্ণ অথবা কয়েকটি বর্ণের সমষ্টিকে শব্দ বা প্রাতিপদিক বলে।”

শব্দ গঠনের উপায়: তিন প্রকার শব্দ গঠন করা যায়। যেমন- ১. উপসর্গযোগে ২. প্রত্যয়যোগে ও ৩. সমাসের সাহায্য।

  • ১. উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগ করে নতুন অর্থবোধক।
    উদাহরণ: প্র + ভাত + প্রভাত (সংস্কৃত উপসর্গ)।
    অ + বেলা = অবেলা (খাঁটি বাংলা উপসর্গ)।
  • ২. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ করে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করা হয়।
    উদাহরণ: √ পড়ু + উয়া = পড়ুয়া (কৃৎ প্রত্যয়যোগে)।
    বাংলাদেশ + ঈ = বাংলাদেশী (ঈ প্রত্যয়যোগে)।
  • ৩. সমাসের সাহায্যে গঠিত শব্দ: সমাসের সাহায্যে প্রচুর বাংলা শব্দ গঠিত হয়েছে ও হচ্ছে।
    উদাহরণ: কাজলের মতো কালো = কাজলকালো।
    কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল।

প্রশ্ন ২। শব্দ বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর। [কু. বো. ১৫; ঢা. বো. ১৫,রা. বো. ১৭]

উত্তর: শব্দ হলো অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির নাম। অবশ্য ধ্বনির সমষ্টি হলেই তা শব্দ হয় না, তাকে একটি অর্থও প্রকাশ করতে হয়। যেমন: বল, কাগজ, কলম।

বিচিত্র উৎস থেকে নানা ধরনের শব্দ সংগৃহীত হয়ে বাংলা ভাষা শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন:

  • (১) উৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ (ক) তৎসম শব্দ-মন্তক, চন্দ্র গৃহ। (খ) অর্ধ-তৎসম-জোছনা, কেষ্ট, তেষ্টা। (গ) তদ্ভব শব্দ- জাতি, কান, মাথা, ভাত। (ঘ) দেশি শব্দ-সূর্য চুলা, ফুল। (ঙ) বিদেশি শব্দ-স্কুল, টেবিল চশমা।
  • (২) গঠনগত দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ: গঠন অনুসারে শব্দসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (ক) মৌলিক শব্দ-মাথা, হাত, জাপান। (খ) সাধিত শব্দ-জাহাজ-ই-জাহাজি, পড় + অন্ত = পড়ন্ত, পঙ্কে জন্মে যা= পঙ্কজ।
  • (৩) অর্থমূলক দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ: (ক) যৌগিক শব্দ – চল্ + অন্ত চলন্ত, ঢাকা + আই = ঢাকাই। (খ) রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ-সন্দেশ, বাঁশি। (গ) যোগরূঢ় শব্দ-রাজপুত, মহাযাত্রা।

প্রশ্ন: ৩। উৎস বা উৎপত্তির বিচারে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [ব. বো. ০৯; কু. বো.১০]

অথবা, উৎপত্তি (ব্যুৎপত্তি) অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

অথবা, উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর। [সি. বো. ‘০৯]

অথবা, উৎপত্তিগত বিচারে/দিক থেকে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদহারণসহ লেখ। [ঢা. বো. ‘০৩, ‘০৯, ‘১২; ব. বো. ‘০৬; য. বো. ‘০৭; রা. বো. ‘০৭]

অথবা, উৎপত্তির বিচারে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণ লেখ। [য. বো. ‘০৫]

অথবা, উৎপত্তিগত দিক থেকে/উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগগুলো উদাহরণসহ আলোচনা কর। [দি. ‘১০; রা. ‘১২]

উত্তর: উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দের প্রকারভেদ: উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগ ভাগ করা হয়েছে। যেমন-১. তৎসম শব্দ, ২. তদ্ভব শব্দ, ৩. অর্ধ-তৎসম শব্দ, ৪. দেশি শব্দ ও ৫. বিদেশি শব্দ। নিম্নে উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

  • ১. তৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অবিকৃতভাবে বাংলা ভাষায় মিলিত হয়েছে সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে।
    উদাহরণ: চন্দ্র, সূর্য, হস্ত, মস্তক, ধর্ম, নক্ষত্র, ভবন, মনুষ্য ইত্যাদি।
  • ২. তদ্ভব শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায় কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে সেসব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে।
    উদাহরণ: সংস্কৃত হস্ত, প্রাকৃত হথ, তদ্ভব হাত। সংস্কৃত – চর্মকার, প্রাকৃত চম্মকার, তত্ত্বব চামার ইত্যাদি।
  • ৩. অর্ধ-তৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কিঞ্চিৎ বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে সেসব শব্দকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। উদাহরণ: গৃহিণী > গিন্নী, জ্যোৎস্না > জোছনা ইত্যাদি।
  • ৪. দেশি শব্দ: যেসব শব্দ আদিকাল থেকে এ দেশের কোল, দ্রাবিড় ও অনার্য ভাষা হতে এসেছে অথবা যাদের মূল অজ্ঞাত অথচ বাংলা ভাষায় প্রচলিত সেগুলোকে দেশি শব্দ বলে। উদাহরণ: চুলা, গোলা, চটি, বাখারি, খোড়, আড্ডা, ঝানু, ঝঞ্ঝা, ঝড়, ঝাঁপ, ঝোপ, ঢেঁকি, ডিঙি, ডাহা।
  • ৫. বিদেশি শব্দ: বাণিজ্যিক, ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কারণে প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশিরা এদেশে এসেছে। এসব বিদেশিদের ব্যবহৃত যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে যেসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে।

ক. আরবি শব্দ: বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-

  • ১. ধর্মসংক্রান্ত শব্দ: আল্লাহ, ইসলাম, অযু, কোরবানি, কুরআন, গোসল, কেয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, তসবি, তওবা, হজ, যাকাত, হারাম, হালাল, হাসিদ, মাদ্রাসা, মুসলিম, মিনার, মিযান, মসিজদ, সিরাত, হাশর, দুনিয়া, দোয়া, জিহাদ, কাফির, নফর, হুর, নূর, রাসূল, কবর, মালউন, তসবিহ, দজ্জাল, আরশ, আমানত, ইবাদত, ইমান ও কিসাস প্রভৃতি।
  • ২. প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: আবির, আমল, আমলা, আমানত, আমিন, আমির, আয়েশ, আরক, আরশ।

খ. ফারসি শব্দ: আইন, আওয়াজ, আঙুর, আচার, আজাদ, আতশবাজি, আদমশুমারি, আন্দাজ, আফসোস, আবাদ।

আরবি-ফারসির মিশ্রণ: মজুমদার, মহাফেজখানা, ওয়াকিবহাল, ওরফে, বয়নামা, বরকন্দাজ, বায়ানানামা, বালাই।

ফারসি-আরবির মিশ্রণ: খোশমেজাজ, খুবসুরত, খোদাতায়ালা, নাবালক, নারাজ, নাহক, নিমক- হারাম, নেক-নজর।

ইংরেজি শব্দ: অফিস, আর্ট, ইঞ্জিন, এনামেল, এজেন্ট, কনস্টেবল, কফি, করগেট, ক্যাপ্টেন, কার্নিস, কলেজ, কেটলি।

পর্তুগিজ শব্দ: আতা, আলমারি, আলপিন, আলকাতরা, ইসপাত, এনতার, কপি, ক্রুশ, কামিজ, কামরা, কেদারা।

ফরাসি শব্দ: আঁশ, ইংরেজ, বুর্জোয়া, রেস্তরাঁ, শেমিজ, কুপন, কার্তুজ, ক্যাফে, ওলন্দাজ, বিস্কুট ইত্যাদি। €

তুর্কি শব্দ: উজবুক, কাঁচি, কাবু, বিবি, কুলি, কোর্মা, খাতুন, চাকু, বোঁচকা, আলখাল্লা, বেগম, লাশ ইত্যাদি।

ওলন্দাজ শব্দ: ইসক্রুপ, তুরূপ, টেক্কা, ইস্কাপন, হরতন, রুইতন ইত্যাদি।

চীনা শব্দ: লিচু, টাইফুন, চা, চিনি, এলাচি, হোয়াংহো ইত্যাদি।

জাপানি শব্দ: প্যাগোডা, নিপ্পন, হাস্নাহেনা, রিকশা, হারিকিরি, টোকিও ইত্যাদি।

বার্মিজ শব্দ: লুঙ্গি, ফুঙ্গি, ঘুঘনি, কিয়াং, মিয়ানমার, আরাকান, ইয়াঙ্গুন ইত্যাদি।

রুশ শব্দ: বলশোভিক, মস্কতা, সোভিয়েত, স্পুটনিক ইত্যাদি।

গ্রিক পথ: দার্থাম (Durkham) > দাম, গোনোস (Gonos)> কোণ, কেল্টর (Centor) > কেন্দু ইত্যাদি।

• প্রধানত ইংরেজি ভাষা থেকে আগত অন্যান্য ভাষার শব্দ।

অস্ট্রেলিয়া– ক্যাঙ্গারু; জার্মানি-ফ্যুরার; তিব্বতী-লামা; দক্ষিণ আফ্রিকা-জেব্রা। পেরু-কুইনাইন;

মালয়-কালাতুয়া, গুদাম, কিরিচ, সাগু, সিংহল-বেরিবেরি।

আরবি-চীনার মিশ্রণ – কাবাব-চিনি।

তুর্কি-ফারসির মিশ্রণ – চুগলিখোর, মোগলাই।

আরবি-তুর্কির মিশ্রণ – খাজাঞ্চি।

মিসরীয় শব্দ: মিসরি > মিছরি।

প্রশ্ন: ৪। অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ লেখ/বর্ণনা/আলোচনা কর। [সি, বো. ‘০৫, ‘০৭, ‘১২: ব. বো, ‘৩৩, ০৭: রা, বো, ‘০৮, ‘১৫; দি. য. ‘১১]

অথবা, অর্থ অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়। উদাহরণসহ বিবরণ দাও। [ব. বো. ‘০৫]

অথবা, অর্থের পার্থক্যের বিচারে বাংলা ভাষা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী। উদাহরণসহ আলোচনা কর। [য. ‘০৬; চ. ‘১১]

অথবা, অর্থ অনুযায়ী শব্দের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর। [কু, বো, ‘০৫; রা. বো, ‘১১)

অথবা, অর্থ অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর। [কু. বো. “‘১২]

অথবা, অর্থ বিচারে শব্দ কয় প্রকার ও কী কী। বর্ণনা কর। [র. বো. ‘১২]

অথবা, অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ লেখ। [ব. বো. ‘০৭]

অথবা, অর্থগত দিক থেকে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [য. বো. ‘০৩]

অথবা, অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী। উদাহরণসহ আলোচনা কর। [সি. বো, ‘১০। দি, বো, ‘১৫]

উত্তর: অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দের প্রকারভেদ অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে তিন ভাগে ভাগ বিভক্ত করা যায়। যেমন- ১. যৌগিক শব্দ, ২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ও ৩. যোগরূঢ় শব্দ।

১. যৌগিক শব্দ: যেসব শব্দের অর্থ তাদের প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থানুযায়ী হয়ে থাকে, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে।
উদাহরণ: √কৃ + তব্য = কর্তব্য – অর্থ: যা করা উচিত।

চিকা + মারা = চিকামারা – অর্থ দেওয়ালের লিখন।

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ: যেসব শব্দ প্রকৃতি ও প্রত্যয় অনুসারে অর্থ প্রকাশ না করে, অন্য কোন অর্থ প্রকাশ করে সেগুলোকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে।
উদাহরণ: জ্যাঠামি = জ্যাঠা + আমি (মূল অর্থ জেঠার মতো না বুঝিয়ে পাকামি বা চপলতা বোঝানো হয়েছে)। বাঁশি = বাঁশ + (মূল অর্থ বাঁশের তৈরি না বুঝিয়ে বাদ্যযন্ত্র বোঝানো হয়েছে)।

৩. যোগরূঢ় শব্দ: যেসব প্রকৃতি প্রত্যয়ের অর্থকে সংকুচিত করে এক বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। একমাত্র পদ্ম ফুলকে বোঝায়)।
উদাহরণ: পক্ষে জন্মে যা = পঙ্কজ (বিশেষ অর্থে জল ধারণ করে যে = জলধি (বিশেষ অর্থে সমুদ্রকে বোঝায়)।

প্রশ্ন: ৫। শব্দের সংজ্ঞা দাও। গঠন অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা, শব্দ কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ প্রথাও আলোচনা কর।

অথবা, শব্দের গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ কর এবং প্রত্যেক প্রকার শব্দের উদাহরণ দাও।

অথবা, শব্দ কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [ঢা. বো. ‘১৫]

উত্তর: শব্দের সংজ্ঞা: এক বা তারও বেশি ধ্বনি বা বর্ণ মিলে যখন একটি অর্থ প্রকাশ পায় তখন তাকে শব্দ বলে। অর্থাৎ অর্থযুক্ত ধ্বনিকেই শব্দ বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: ড. মুহম্মদ এনামূল হকের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে অর্থবোধক হলে তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। শব্দ বলতে মানব কণ্ঠ নির্গত এক বা একাধিক সার্থক (অর্থযুক্ত) ধ্বনিসমষ্টি বুঝায়।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোনো বিশেষ সমাজে নরনারীর কাছে যে ধ্বনির অর্থ স্পষ্ট আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নরনারীর ভাষার শব্দ। এ অর্থে কেবল মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থপূর্ণ ধ্বনিই শব্দ।”

ড. সুকুমার সেনের মতে, “অর্থবোধক একটি মাত্র বর্ণ অথবা কয়েকটি বর্ণের সমষ্টিকে শব্দ বা প্রাতিপদিক বলে।”

গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দের শ্রেণিবিভাগ: গঠন অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সব শব্দকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ ও ২. সাধিত শব্দ।

১. মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দ: যেসব বাংলা শব্দকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না এবং যার সঙ্গে কোনো প্রত্যয়, বিভক্তি বা উপসর্গ যুক্ত থাকে না তাকে মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দ বলে। উদাহরণ: গোলাপ, বই, আকাশ, লাল, বাবা, মা, হাত, তিন ইত্যাদি।

২. সাধিত শব্দ: যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় এবং বিশ্লেষণে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায় তাকে সাধিত শব্দ বলে। উদাহরণ: রাখাল + রাজা রাখালরাজা। দোকান দার দোকানদার।
মোগল+ আই = মোগলাই। প্রশাসন = প্রশাসন ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ৬। শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠন প্রক্রিয়াগুলো আলোচনা কর। [সি. ‘০৬; কু. বো. ‘১৫]

অথবা, বাংলা ভাষা কী কী উপায়ে শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ। [চ. বো. ‘১২; ‘১৫]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? শব্দ গঠনের উপায়গুলো উদাহরণসহ আলোচনা কর। [দি. বো. ‘০৯]

অথবা, শব্দ গঠন কী? বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের নিয়মগুলো লেখ। [ব. বো. ‘১১]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ/আলোচনা কর। [ঢা, বো. ‘১১]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? বাংলা শব্দ গঠনের উপায়সমূহ কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [সি. বো. ‘০১; ঢা. বো, ‘০৮; দি. বো, ‘১২]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও। [য. বো. ‘০৪; সি. বো. ১১]

অথবা, কী কী উপায়ে বাংলা ভায়া শব্দ গঠন করা যায়। উদাহরণসহ আলোচনা কর। [রা, বো, ‘০৪, ০৬]

অথবা, শব্দ গঠন কাকে বলে? কী কী উপায়ে শব্দ গঠিত হয়- আলোচনা কর। [কু. বো. ১১]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী পদ্ধতিতে/উপায় শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ। [য. বো. ‘০২, ‘১২; ঢা. বো. ‘০৪, ‘০৬; সি. ব. বো. ০৮]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠনের তিনটি নিয়ম উল্লেখ কর। [ঢা. বো, ‘০২]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? সার্থক শব্দ গঠনের উপায়গুলো উদাহরণসহ লেখ। [কু. যো, ‘০৩, ০৬০৪. বো, ০৬]

অথবা, কী কী উপায়ে বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ। (চ.’০৩; ব. ‘০৪: সি. ‘১৫: য. ‘১০]

অথবা, কী কী উপায়ে বাংলা শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [চ. ‘০৮; দি. বো, ‘০৯]

উত্তর: শব্দ গঠন রীতির সংজ্ঞা: বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডার বিভিন্ন ভাষার শব্দ সমন্বয়ে গড়ে ওঠেছে। প্রতিটি ভাষারই মূল শব্দ খুব বেশি থাকে না। বাংলা ভাষারও মূল শব্দ সাধিত শব্দের তুলনায় অনেক কম। কেবল মূল শব্দের আশ্রয়ে ভাষার সমৃদ্ধি ও প্রবহমানতা সম্ভব নয়। তাই নতুন শব্দ তৈরি হয়। নতুন শব্দ তৈরির নিয়ম ও রীতি আছে। মূল শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় ও উপসর্গ ইত্যাদি যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা হয়। আবার সন্ধি ও সমাস দ্বারাও নতুন শব্দ তৈরি হয়।

উদাহরণ: উপসর্গযোগে: সুনাম সুনাম। প্র + হার = প্রহার।
প্রত্যয়যোগে: মোগল+ আই = মোগলাই। ঢাকা + আই = ঢাকাই।
সমাসযোগে: তিন ভূবনের সমাহার ত্রিভুবন। সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।

• শব্দ গঠিত হওয়ায় উপায়: তিন প্রকারে শব্দ গঠন করা যায়।

যেমন- ১. উপসর্গযোগে, ২. প্রত্যয়যোগে ও ৩. সমাসের সাহায্যে।

  • ১. উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়।
    উদাহরণ: প্র + ভাত = প্রভাত (সংস্কৃত উপসর্গ)।
    অ + বেলা = অবেলা (খাঁটি বাংলা উপসর্গ)।
  • ২. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: পড় + উড়া = পড়ুয়া (কৃৎ প্রত্যয়যোগে)। বাংলাদেশ + ঈ = বাংলাদেশী (ঈ প্রত্যয়যোগে)।
  • ৩. সমাসের সাহায্যে গঠিত শব্দ: সমাসের সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়। উদাহরণ: কাজলের মতো কালো কাজলকালো।
    কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল।

প্রশ্ন: ৭। গঠন অনুযায়ী বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যয় ও উপসর্গযোগে শব্দ কীভাবে গঠিত হয়? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [কু. বো. ‘০৪; য. বো. ‘০৯]

অথবা, গঠনানুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ কয় ভাগে বিভক্ত হতে পারে? উদাহরণসহ লেখ। (চ. বো. ‘১০]

অথবা, গঠন অনুযায়ী বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ লেখ। [বি. বো. ‘১০]

অথবা, প্রত্যয়যোগে ও উপসর্গযোগে কীভাবে শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও। [ঢা. বো, ‘০১]

উত্তর: গঠন অনুযায়ী বাংলা শব্দের প্রকারভেদ: গঠন অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দসমূহ দু ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: ১. মৌলিক শব্দ ও ২. সাধিত শব্দ।

প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন: প্রত্যয় নতুন শব্দ গঠন করার একটি কৌশল। প্রত্যয়যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয় তার উৎস দু’ধরনের- একটি ধাতুর আর অপরটি শব্দ। কখনো ধাতুর সঙ্গে কখনো শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় যোগ করে যেসব শব্দ গঠন করা হয় সেসব শব্দ বিশ্লেষণ করলে মূল উৎস হিসেবে কখনো ধাতু আবার কখনো শব্দ পাওয়া যায়। শব্দের এ মূল রূপের নাম প্রকৃতি। আর প্রকৃতির সঙ্গে যে শব্দ অথবা শব্দাংশ মিলিত হয়ে বিভক্তিহীন নতুন শব্দ গঠন করে তাই প্রত্যয়। প্রত্যয়ের সাহায্যে গঠিত শব্দকে প্রত্যায়ান্ত শব্দ বলে।

উদাহরণ: দিন + ইক প্রত্যয়ান্ত শব্দ ‘দৈনিক’।
√পঠ + অক = প্রত্যয়ান্ত শব্দ ‘পাঠক’।

উপসর্গযোগে শব্দ গঠন: উপসর্গ পৃথক কোনো অর্থ প্রকাশ করতে পারে না, এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। তারপরও এরা নতুন শব্দ গঠন করে এবং নতুন নতুন অর্থ নির্দেশ করে। ধাতুর আগে বসে এরা ধাতু নিষ্পন্ন শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ, সংকোচন বা পরিবর্তন সাধন করে। যেমন: হৃ একটি ধাতু, হার হচ্ছে হৃ ধাতু নিষ্পন্ন একটি শব্দ। এই ‘হার’ শব্দের পূর্বে অব্যয়সূচক শব্দ ‘আ’ বর্ণটি বসলে গঠিত হয় নতুন শব্দ ‘আহার’। এরূপে প্র+হার= প্রহার; বি+হার= বিহার। আবার একই ধাতুর আগে একের অধিক উপসর্গ মিলিত হতে পারে।

উদাহরণ: তন্‌ + √দ্রা + আলু = তন্দ্রালু। নি + √দ্রা = আলু + নিদ্রালু ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ৮. কমপক্ষে দুটি করে উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠনের পাঁচটি পদ্ধতি লেখ। [ঢা. বো. ০১]

  • উত্তর: উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠনের পাঁচটি পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-
    ১. বিভক্তিযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের পর বিভক্তি যোগ হলে তা পদে পরিণত হয়। তাছাড়া বচন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। এতে নতুন অর্থ প্রকাশ পায়।
    উদাহরণ: চীন + আ = চীনা। √চল + অন্ত চলন্ত।
  • ২. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: √ পড় + উয়া = পড়ুয়া (কৃৎ প্রত্যয়যোগে)
    বাংলাদেশ + ঈ = বাংলাদেশী (ঈ প্রত্যয়যোগে)।
  • ৩. উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়।
    উদাহরণ: প্র + ভাত = প্রভাত (সংস্কৃত উপসর্গ)। অ + বেলা = অবেলা (খাঁটি বাংলা উপসর্গ)।
  • ৪. সন্ধির সাহায্যে গঠিত শব্দ: সন্ধির সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা।
  • ৫. সমাসের সাহায্যে গঠিত শব্দ: সমাসের সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: কাজলের মতো কালো কাজলকালো।
    কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল।

প্রশ্ন: ৯। দ্বিরুক্তি শব্দ কাকে বলে? দ্বিরুক্তি শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

উত্তর: দ্বিরুক্তি শব্দের সংজ্ঞা: দ্বিরুক্তি শব্দের অর্থ দু’বার বলা। বাংলা ভাষায় কোনো কোনো শব্দ, পদ বা অনুকার শব্দ নিজে নিজে যে অর্থ প্রকাশ করে সেগুলো দু’বার ব্যবহার করলে অন্য কোনো সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে। একই শব্দের এরূপ প্রয়োগকেই দ্বিরুক্তি শব্দ বলে। যেমন: আমার জ্বর হয়েছে। এখানে ‘জ্বর’ শব্দটি সাধারণ জ্বর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আমার জ্বর জ্বর লাগছে বললে ‘জ্বর জ্বর’ শব্দটি ঠিক জ্বর নয় জ্বরের ভাব প্রকাশ করে।

দ্বিরুক্তি শব্দের প্রকারভেদ: দ্বিরুক্তি শব্দকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. খাঁটি দ্বিরুক্তি শব্দ ও ২. অনুচর দ্বিরুক্তি শব্দ। নিচে প্রত্যেক প্রকার দ্বিরুক্তি শব্দের সংজ্ঞাসহ উদাহরণ দেয়া হলো:

  • ১. খাঁটি দ্বিরুক্তি শব্দ: একই অপরিবর্তিত অবস্থায় পর পর দু’বার বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হলে তাকে খাঁটি দ্বিরুক্তি শব্দ বলে। উদাহরণ: তার টানা টানা চোখ মন কেড়ে নেয়।
    ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরে ঝরে পড়ছে।
  • ২. অনুচর দ্বিরুক্তি শব্দ: যেসব দ্বিরুক্তি শব্দে প্রথম শব্দের সঙ্গে মিল রেখে পরবর্তী শব্দ বসে তাকে অনুচর দ্বিরুক্তি শব্দ বলে। উদাহরণ: বেয়াই, আমার মেয়েটাকে দেখেশুনে রাখবেন। সাবধানে থেকো, তোমার আশপাশের মানুষগুলো ভালো না।
1306 Views
No Comments
Forward Messenger
1
বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
বাক্যের রুপান্তর | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
ক্রিয়ার ভাব | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
সমাস | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
প্রকৃতি ও প্রত্যয় | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
পদ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
বাংলা বানানের নিয়ম | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
উচ্চারণ রীতি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
No comments to “বাংলা শব্দ গঠন পদ্ধতি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)”