তামিম আহমেদ
তামিম আহমেদ
23 Mar 2024 (1 month ago)
আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ

বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)


Listen to this article

বাক্য

বাক্যের পরিচয়:

আমরা বাক্য তৈরি করি এক বা একাধিক শব্দ একত্রে সাজিয়ে। যেমন- ‘আমি বাড়ি গিয়ে ভাত খাব।’ মনে রাখতে হবে, শব্দ যখন বাক্যে স্থান পায় তখন তার পরিচয় হয় ভিন্ন। বাক্যের শব্দকে বলে পদ। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যোগে করলেই পদ তৈরি হয়।

বাক্যগঠন:

বিভিন্ন পদের সাহায্যে বাক্য গঠিত হয়। কিন্তু পদগুলো পরপর সাজালেই বাক্য হবে না।

যেমনঃ বসেছিলাম সকালে পাশে রাস্তার আমি। এ-বাক্যে পাঁচটি পদ আছে। কিন্তু বাক্য হয়নি। কারণ পদগুলোর সাহায্যে কোনো অর্থ বোঝাচ্ছে না।

বাক্যের পদগুলো ঠিকমতো পরপর বসালেই চেহারা বদলে যাবে, বাক্যটি অর্থপূর্ণ হবে। যেমন- আমি সকালে রাস্তার পাশে বসেছিলাম।

বাংলা বাক্যের গঠন হলো কর্তা কর্ম + ক্রিয়া (Subject + Object + Verb), সংক্ষেপে SOV।

বাক্যের গুণ:

ভাষার বিচারে বাক্যের এ গুণ তিনটি গুণ থাকা চাই। যথা:

  1. আকাঙ্ক্ষা
  2. আসত্তি
  3. যোগ্যতা

আকাঙ্ক্ষা:

বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্যপদ শোনার যে ইচ্ছা তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন: চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে- এইটুকু মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে না, আরও কিছু জানার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু যদি বলা যায় চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তবে বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে। অর্থাৎ কোনো বাক্য শ্রবণ করে যদি বাক্যের উদ্দেশ্য বোঝা যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে বাক্যটির আকাঙ্ক্ষা গুণটি সম্পূর্ণ।

আসত্তি:

বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমন: কাল বিতরণী হবে উৎসব আমাদের পুরস্কার স্কুলে অনুষ্ঠিত। বাক্যটি ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু, কাল আমাদের স্কুলে পুরস্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, বাক্যটি আসত্তিসম্পন্ন। অর্থাৎ, বাক্যের পদগুলো যদি এরুপ সজ্জিত থাকে যে বাক্যের সম্পূর্ণ অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, তবে তার আসত্তি গুণটি সম্পূর্ণ।

যোগ্যতা:

বাক্যস্থিত পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন: বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয় বাক্যটি যোগ্যতা সম্পন্ন, কিন্তু বর্ষার রোদে প্লাবনের সৃষ্টি হয় বললে বাক্যটি তার যোগ্যতা হারাবে। কারণ, রোদের কারণে কখনো প্লাবণ সঙ্গঠিত হয় না। অর্থাৎ, বাক্যের অর্থ যেন সত্য ও যুক্তিযুক্ত হয়। তাহলেই বাক্যের যোগ্যতা থাকবে।

বাক্যের অংশ :

প্রতিটি বাক্যে ২টি অংশ থাকে: উদ্দেশ্য ও বিধেয়।

উদ্দেশ্য: বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: আব্দুরহিম স্কুলে যায়। এখানে আব্দুর রহিম উদ্দেশ্য।

বিধেয়: উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয় তাই বিধেয়। আর স্কুলে যায় বিধেয়।

গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ:

গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা:

  1. সরল বাক্য (কর্তা+কর্ম+ক্রিয়া)
  2. জটিল বাক্য (সাপেক্ষ সর্বনাম+বাক্য+সাপেক্ষ সর্বনাম+বাক্য)
  3. যৌগিক বাক্য (….+অব্যয়+….)

সরল বাক্য :

যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- ছেলেরা ফুটবল খেলছে।

জটিল বাক্য :

যে বাক্যে একটি প্রধান বাক্যাংশ এবং এক বা একাধিক অপ্রধান বাক্যাংশ থাকে, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। যেমন- যে মানুষের সেবা করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।

যৌগিক বাক্য :

পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা দুয়ের অধিক বাক্য যখন কোনো সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন- সে দরিদ্র, কিন্তু সুখী।

বাক্য গঠনের নিয়ম

বাক্য গঠিত হয় শব্দ দিয়ে এবং বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি শব্দকে বলা হয় পদ। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ বা পদ সাজানোর সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। বাক্যে পদ সংস্থাপনার এ পদ্ধতিকেই বাক্যের পদ সংস্থাপন রীতি বা পদক্রম বলা হয়। ভাষার শুদ্ধ ও সার্থক প্রয়োগের জন্য পদ সংস্থাপনরীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। বাক্যে পদের এলোমেলো ব্যবহার হলে মনের ভাব সার্থকভাবে প্রকাশিত হয় না। যেমন: ‘ভাই দুই আমরা যাই ঢাকা’ বললে কোনো অর্থ বোঝা যায় না, কিন্তু ঐ শব্দগুলো এভাবে পদক্রম অনুযায়ী সাজালে অর্থ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন: ‘আমরা দুই ভাই ঢাকা যাই।’

বাক্যে পদ বসানোর কতিপয় প্রচলিত নিয়ম

১. বাক্যে সবচেয়ে প্রচলিত পদবিন্যাস হচ্ছে কর্তা প্রথমে, কর্ম মাঝে এবং ক্রিয়া শেষে। যেমন: আমি বই পড়ি। সে বাড়ি যায়।

২. ক্রিয়া বিশেষণ ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন: রানা ডুকরে কাঁদছে। রহিত দ্রুত হাঁটছে।

৩. বাক্যে কর্ম থাকলে ক্রিয়া বিশেষণ কর্মের আগে বসে। যেমন: মামুন নীরবে বই পড়ছে। শিক্ষক জোরে চাবুক কষছেন।

৪. সময়বাচক ও স্থানবাচক পদ কর্মের আগে বসে। যেমন: কাল কলেজ বন্ধ ছিল। আমি বৃহস্পতিবার ঢাকা যাব।

৫. না-বোধক অব্যয় সমাপিকা ক্রিয়ার পরে বসে। যেমন:আমি খাইনি। কে পড়া শেখেনি?

৬. প্রশ্নবোধক সর্বনাম ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন: আপনি কী চান? আকাশে কী দেখছ?

৭. বিধেয় বিশেষণ বিশেষ্যের পরে বসে। যেমন: ছেলেটা বুদ্ধিমান। লোকটি বোকা।

৮. বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সম্বন্ধ পদ বিশেষ্যের পরেও বসে। যেমন: মুখটি তোমার কিন্তু সুন্দর। প্রাণ তার খুব শক্ত।

তবে মনে রাখতে হবে, এই পদবিন্যাস অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়। বক্তার মনোভাব, বলার বিশেষ ধারা বা স্টাইল ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদির ওপর নির্ভর করে পদবিন্যাস রীতি কেমন হবে।

74 Views
No Comments
Forward Messenger
বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
বাক্যের রুপান্তর | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
ক্রিয়ার ভাব | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
সমাস | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
প্রকৃতি ও প্রত্যয় | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
বাংলা শব্দ গঠন পদ্ধতি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
পদ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
বাংলা বানানের নিয়ম | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
উচ্চারণ রীতি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)
-
- -
No comments to “বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC)”